সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : এখন রাজশাহীতে মাত্র তিনদিনেই মিলছে ভারতীয় ভিসা। ভিসার আবেদন গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই পদ্ধতি সহজ করায় দুর্ভোগ কমেছে ভিসা প্রত্যাশীদের। বাংলাদেশীদের ভারতে চিকিৎসায় আগ্রহীদের সুবিধা দিতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ভিসার আবেদনকারীদের কাগজপত্রে কোনো জটিলতা থাকলে সেটি সমাধানেরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকেই। ফলে এখন অনেকটাই বদলে গেছে ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার-আইভ্যাকের সেবার মান।
ভিসা প্রত্যাশীরা জানান, মহানগরীর বর্ণালী মোড়ে আইভ্যাক সেন্টারে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। আগে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার জন্য দুই দিন থেকেই লাইন শুরু হতো। রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিরা আগের দিন বিকেল থেকেই লাইন ধরতেন। সেখানেই খোলা আকাশে নিচে রাত কাটাতেন বহু মানুষ। রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজেও দাঁড়িয়ে থাকতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিশেষ করে মেডিকেল ভিসা পেতে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। জরুরি আবেদনের পর ২০-২৫ দিন সময় লাগতো ভিসা পেতে। তবে গেল এখন সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার হালিমুজ্জামান একটি বিদ্যুৎ প্লান্টে চাকরি করতেন। হঠাৎই তার মেরুদণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ে। পরিস্থিতি জটিলে রূপ নেয়। তাই চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য মাসখানেক আগে রাজশাহীতে ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার-আইভ্যাকে ভিসার আবেদন করেন। এর ১৫দিন পর তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু আইভ্যাক থেকে জানানো হয় নি কী কারণে তিনি ভিসা পান নি।
এরই মধ্যে মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে চলাফেরারও বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওয়েবসাইট থেকে ইমেইল অ্যাড্রেস নিয়ে সরাসরি ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সাথে দেখা করতে চেয়ে চিঠি লেখেন। খুব কম সময়ের সময়ের মধ্যে উত্তরও আসে ইমেইলেই। সহকারী হাইকমিশনারের সাথে দেখা করে আবেদন পুনরায় জমা দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই ভিসা হাতে পেয়েছেন হালিমুজ্জামান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেক ভিসা প্রত্যাশী মামুনুর রশিদ বলেন, দালালের মাধ্যমে আবেদন জমা দেয়ায় খরচ ও সময় বেশি লাগতো। কিন্তু নিজেই নিজেই আবেদন জমা দিলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় না। দ্রুত ভিসা পাওয়া যায়।
রাজশাহীতে ভিসা নিতে আসা বগুড়ার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আবেদন জমা দেয়ার পর তিন দিনের মধ্যেই তিনি মেডিকেল ভিসা পেয়েছেন।
রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন ১২০০ ভিসার আবেদন জমা পড়ে। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে অনন্ত ১০০০ ভিসা দেয়া হচ্ছে। যা ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেকর্ড। রাজশাহী অঞ্চলের ভিসা আবেদনপত্র জমার সেন্টারগুলোকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে জমা নেওয়া হয়।
রাজশাহীতে নবনিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার যোগদানের পর বিভিন্ন সময়ে আকস্মিকভাবে আইভ্যাক হঠাৎ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, আবেদনকারীরা যাতে সহজেই ভিসা পান।
সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমারের উদ্যোগের পর এখন চিকিৎসা ভিসার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যেই মানুষ চিকিৎসা ভিসা পাচ্ছেন। চিকিৎসা ভিসাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ভ্রমণ ভিসা ৮-১০ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। এই সময়সীমা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া ভিসার আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র না থাকলে আবেদনকারীকে ফোনে দিয়ে সেই কাগজপত্র জমা দেওয়ারও জন্য বলা হচ্ছে। যারা অনেকদিন ধরে ভিসা পাচ্ছে না অথবা অন্য কারণে ভিসা পাচ্ছে না তাদেরকেও অফিসে ডেকে সমস্যার বিবরণী শোনার পর ভিসা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন এই বিষয়গুলোকে আরও নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করছে এবং সঠিক কারণ থাকলে বিষয়গুলোকে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনে কেউ সমস্যা নিয়ে আসলে অনেক সময় এখানকার সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার নিজেই দেখা করেন এবং চেষ্টা করেন তার সমস্যা যুক্তিযুক্ত হলে অতিদ্রুত সমাধানের।