রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সাপাহার প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহারে এখন দিগন্ত ছুঁয়ে মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাঠের দিকে তাকালে হলুদের সমারহ আর সরষে ফুলের মৌমৌ গন্ধে যেন চোখ ফেরাতেই মন চায় না। দৃষ্টিনন্দন সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠের পর মাঠ। সরষে গাছে হলুদ রঙের সরষে ফুলে যেন বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার মাঠগুলোতে এমনটাই নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন সকলের নজর কাড়ছে। চলতি বছরে আবহাওয়া কৃষকের অনুকুলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের স্বপ্নও দেখছেন এলাকার সরিষা চাষীরা।
ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র নামে খ্যাত নওগাঁর সাপাহার অঞ্জলের মাটির গুণগত মান ও উর্বর শক্তি বেশ ভালো হবার ফলে সব ধরণের কৃষিপণ্য উৎপদন হয়ে থাকে এই উপজেলায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো রবি মৌসুমের কৃষিপণ্য সরিষা,ডাল, গম,তিল,তিশি ইত্যাদি। রবি মৌসুমের এই মহেন্দ্রক্ষনে উপজেলার প্রায় সবগুলো সরিষাক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে,গাছে ফুটতে শুরু করেছে সরিষাবীজ। দখিনা সমীরণে দোল খাচ্ছে সরিষা ফুল ও তরতাজা বীজগুলো। সরিষা গাছে হলুদ ফুল দেখে এবারে সরিষার অধিক ফলন ও বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধেচেন এখনার কৃষক কুল।
সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ সরিষাক্ষেত উাজেলার কলমুডাঙ্গা, হাঁপানিয়া, আইহাই ও কৃষ্ণসদা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুনর্ভবা নদীর একাংশ ও ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের বিস্তর দিগন্ত জুড়ে চোখ জুড়ানো সরষে ক্ষেত ও হলুদের গালিচা বিছানো মাঠের পরে মাঠ। চারিদিকে মৌমাছিদের গুনগুনানী গানের সুরে এলাকা মুখরিত করে তুলছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া চাষীদের অনুকূলে থাকার ফলে সরিষার গাছ রোগবালাইমুক্ত রয়েছে।
উপজেলার কলমু ডাঙ্গা গ্রামের সরিষাচাষী আব্দুস সালাম জানান যে, চলতি বছরে সে তার ১৫বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছে। গত বছরে সরিষাতে অধিক লাভবান হওয়ায় সে এবছর আবারো সরিষা চাষ করেছে।
উপজেলার আইহাই গ্রামের সরিষাচাষী রেজাউল করিম জানান যে, গত বছর সরিষা চাষে অধিক লাভ করায় তিনিও এবারে তার ২০বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো আছে কোনরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারে সরিষার বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা আছে। বাজারদর ভালো থাকলে এবছরে অধিক লাভ হবার সম্ভাবনাও রয়েছে সরিষা চাষিদের। সরিষা তুলে সকল চাষী আবার ওই জমিতে তাদের সোনালী স্বপ্ন বোর ধান রোপন করবেন, আমন আবাদের পর সরিষা তাদের একটি লাভজনক বাড়তি ফসল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাপলা খাতুন বলেন, চলতি বছরে এই উপজেলায় প্রায় ৩হাজার ৬শ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে এবং প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় মেট্রিক টন। সেমতে এবারে সারা উপজেলায় মোট ৫হাজার ৪শ’ ১৫ মেট্রিকটন সরিষা উৎপন্ন হওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভালো ফলনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সরিষাচাষীদের সব ধরণের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও সরিষাচাষীদের মাঝে সরকারী প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। সরাকারী অনুদান পাওয়ায় এবারে অনেক পতিত জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে, ভবিষ্যতে সরকারের এধরণের উদ্যোগ অব্যহত থাকলে সামনের দিনগুলিতে এ উপজেলায় সরিষা চাষীর সংখ্যা ও আবাদের পরিমাণ অনেগুনে বেড়ে যাবে বলে সরিষা চাষীরা মনে করছেন। এবছর শুরুতেই সরিষার তরতাজা গাছ ও গাছে সরিষাবীজ আসা দেখে হলুদ ফুলের মাঝেই এখানকার কৃষক খুঁজে পেয়েছে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।