বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: নয়া পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা ও হাতবোমা নিক্ষেপের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে পল্টন থানার মামালায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে পুলিশ।
বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতাকে প্রায় দশ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “পল্টন থানায় ৮ তারিখে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজই তাদের আদালতে হাজির করা হবে।”
সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা হল, তারা পুলিশের ওপর বর্বোরিচত হামলায়, ককটেল নিক্ষেপের উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা এটা পেয়েছি।” বিএনপির আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবকিছুই খেয়াল রাখছি। কেউ যদি এরকম অপরাধ করে, তারা আমাদের নজরদারিতে থাকবে।”
বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল এবং ও শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দুজনেই সকালে বলেছিলেন, ‘সাদা পোশাকের পুলিশ’ এসে তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে পুলিশের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য না এলেও আট ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয়ে রেখে দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানায় পুলিশ। তারপর বেলা আড়াইটার দিকে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর কথা হারুন অর রশীদ জানান। এদিকে ঢাকায় বিএনপির শনিবারের সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও সমাবেশ ঠিক কোথায় হচ্ছে সে ব্যাপারে পুলিশ ও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আমাদের বৈঠক হয়। তখন তারা কমলাপুর স্টেডিয়ামের কথা বলেন। কিন্তু আমরা তাদের মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠের কথা বলি। আজকে তারা আবার গোলাপবাগ মাঠের কথা বলেছে। সেটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর বিস্তারিত বলা যাবে।”
ঢাকার নয়া পল্টনে বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধলে সড়কে বেঞ্চ ও ফেস্টুন জড়ো করে তাতে আগুন দেয় দলটির কর্মীরা। বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।
নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ। এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে। এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তারপরও বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ ‘হবে’। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে। রাতের সেই বৈঠকের পর ভোর হওয়ার আগেই মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক বরে নিয়ে যাওয়ার খবর আসে; কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানাল।