বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খেলেও বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনও ধরনের অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কিছু কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে নানাভাবে। অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। সেখানে আমি বলবো যে, বিভ্রান্ত হবার মতো কিছু নেই।’
সোমবার মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসি ন্যাশনাল ডিফেন্সে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তার ওপরে আবার মরার ওপর খরার ঘা এসেছে রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ। যুদ্ধের সঙ্গে এলো স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো বা ধনী দেশগুলোও আজকে আপনারা জানেন যে, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এবং তারা হিমশিম খাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে, খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায়ও আমি বলতে পারি— বাংলাদেশকে এখনও স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য, যখনই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশটা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, সবার তা হয়তো পছন্দ হয় না, এটা হলো বাস্তব।’ মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বে লকডাউনে ভ্রমণ ও আমদানি বন্ধ থাকাকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তার সরকার বিনামূল্যে টিকা দিয়েছে, প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।
যুদ্ধের কারণে আমদানি পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে কোনও কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচা করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচা করতে হয়েছে। আমরা করেছি। তারপরও আমাদের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, আমাদের ফসল উৎপাদন হচ্ছে, আমরা সার থেকে শুরু করে সব কিছু কৃষকদের কাছে খুব স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।’
যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে যে যা পারবে তা উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান শেক হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে খাদ্য সংকট, তা যেন বাংলাদেশে না হয়।’ দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে শেক হাসিনা বলেন, ‘সবারর কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের কোনও রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কাটা কিন্তু আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং পড়তে যাচ্ছে, পড়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, বিশ্বটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বটা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাবো।’
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। আমরা নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করবো। নিজের দেশকে নিজে গড়ে তুলবো। এই কথাটা যদি আমরা মাথায় রাখতে পারি, আর এই আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি চলতে পারি— ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নতি করুক। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকে এগিয়ে যাক, সেটাই তার সরকারের লক্ষ্য। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। বাংলাদেশ একটা দেশ, পৃথিবীতে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি যে, প্রতিটি দেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এবং সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’