রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ
ফল পুনঃমূল্যায়ন করে ন্যায্য ফল প্রদানের দাবিতে এবার আমরণ অনশনে বসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ফল পুনঃমূল্যায়ন করে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৪টা) শিক্ষার্থীরা অনশন করছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ফলাফল সংশোধন করে নতুন ফল প্রকাশ করার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে একাধিকবার আশ্বাস দেয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান না করে নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকে। বিপর্যিত ফল সংশোধনের সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে ফল বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তির দাবিও জানান তারা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘প্রাপ্য ফলাফল দিতে হবে’, ‘হুমকি ধামকির বিচার চাই’, ‘ছাত্রবান্ধব বিভাগ চাই’, ‘আমরণ অনশন চলছে চলবে’, ‘ছাত্রদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উর্দু বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ জন নিয়মিত ও ৩ জন অনিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ এপ্রিল তাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে ওই মাসেই শেষ হয়। ২৫ আগস্ট তাদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনের ফল প্রকাশ হয়। ৬ জন নিয়মিত ও দুজন অনিয়মিত শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়নি এবং ৬ জন শিক্ষার্থী একটি করে কোর্সে ফেল করেছেন। যারা সকল কোর্সে পাশ করেছেন তাদের ফলও আশানরূপ হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার ফল আসেনি। মো. আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৭৫ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৬৪। ফৌজিয়া তুরাণী নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে ৩.৮৩ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ২.৭৮। মানিক সুমন প্রথম সেমিস্টারে পান ৩.৬৬ কিš‘ দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৭৫। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৯১ পেয়ে প্রথম হন নিশাত তাসনিম। দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ৩.২৮। এভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয় হয়েছে। অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে উর্দু বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে আমাদের সমস্যা সমাধানের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে অনেকবার সময় নিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাদের বেধে দেওয়া সময় অতিক্রম হলেও আমরা কোনো সমাধান পাইনি। সর্বশেষ গত নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এখনো সমাধান হয় নাই আমরা এই সমস্যার সমাধান চাই। এছাড়া বিভাগের কিছু কিছু শিক্ষকদের দ্বারা আমরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমরা এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।’ বায়োজিদ হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন প্রতিবার সময় নেয়। কিন্তু কোনো সমাধান দেয় না। আজকে না, সাত দিন পরে আসো, আমাদের আর কিছুদিন সময় দাও এসব বলে তারা সময় কালক্ষেপণ করছে। এবার আর আমরা কোনো আশ্বাস মানবো না। ফলাফল সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অনশন চালিয়ে যাবো। এতে মরণ হলে হবে।’ এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে আমরা বিভাগের শিক্ষকদের মিটিং করেছি। ভর্তি কমিটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। সেখানেও এই ফলাফল রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিটি।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেখেছি সেই ফলাফলে কোনো ধরনের ভুল নেই। সার্বিক বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিভাগের শিক্ষকদেরকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য সভা করেছি। তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষে ফেরত নিয়ে যেতে। এছাড়া ফল বিপর্যয়ের এই ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রসঙ্গত, ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হলে ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে ওই দিনই বিভাগের অফিস ও সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্র-উপদেষ্টার আশ্বাসে তালা খুলে দেন তারা। কিন্তু সে আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে গত ২৬ অক্টোবর ফের বিভাগে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
সানশাইন/টিএ