রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেছেন, ‘শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমকে এলোপাতাড়ি মারধর কিংবা গুলি করে হত্যা করা হয়নি। একাত্তরের এই দিনে ঘাতকেরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে হত্যা করে। একেবারে আটঘাট বেঁধে তাকে হত্যার মাধ্যমে বিশ্বিবদ্যালয়ে একটি কালো অধ্যায় রচনা করে এই ঘাতকগোষ্ঠি।’
শুক্রবার সকাল ১০টায় শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এই স্মরণসভার আয়োজন করে মনোবিজ্ঞান বিভাগ।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা আরও বলেন, ঘাতকেরা এখনও সুযোগ পেলেই ছোবল মারে। হতাশ হই। স্বপ্নগুলো যেন বারবার ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়। তবু শহিদ স্মৃতি স্মরণ করে আবারও উজ্জীবিত হই। সামনে এগিয়ে যাই। শুধু মীর আব্দুল কাইয়ুম নন, স্বাধীনতা অর্জনের পথে এইরকম চূড়ান্ত আত্মোৎসর্গের প্রেরণা জুগিয়েছেন ড.শামসুজ্জোহা, শহীদ হবিবুর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দারসহ আরো অনেকে। তাঁরা আমাদের প্রেরণা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা হয়তো এখন অনেক কিছু হতে পারব কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহিদ হতে পারব না। তাই শহিদের মর্যাদা ও সম্মান সবার উর্ধ্বে। যার অন্যতম শহিদ মীর আব্দুল কাইয়ুম। তিনি ছাত্ররাজনীতি সচেতন ছিলেন এবং তৎকালীন শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছিলেন। তাই মাত্র ৩২ বছর বয়সে স্বাধীনাতা বিরোধীরা তাঁকে হত্যা করে। আমরা তাঁর মৃত্যুকে অকাল প্রয়াণ বলে থাকি। অধ্যাপক কাইয়ূম ছিলেন অন্যায়ের বিরোধ্যে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ। তাই এই মৃত্যু আমাদের শুধু ভারাক্রান্তই করে না, হৃদয়ে রক্তক্ষরণও করে। মুক্তি সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভীক যোদ্ধা শহীদ শামসুজ্জ্বোহা ও মীর আব্দুল কাইয়ুমসহ অনেকে হয়ে আছেন স্মরণীয়। যাদের রক্ত আমাদের প্রেরণা জোগায়।
সভায় মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে এদিন সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তারপর সিনেট ভবনে শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ূমের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘মরণজয়ী শহীদ মীর কাইয়ূম’ প্রদর্শিত হয়। আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধতন শিক্ষক- কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন শিক্ষক শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ুমকে ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে পাকবাহিনী শহরের ঘোড়ামারায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ৩০ ডিসেম্বর শহরের বাবলাবন বধ্যভূমি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।