রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীতে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যেই এক সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের সামনে রাজশাহীর একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাংবাদিকরা থানা ঘেরাও করেছেন। শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সাংবাদিকরা রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানা ঘেরাও করেন। ৫টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও সাংবাদিকরা থানার সামনে রাস্তায় বসেছিলেন। তাঁরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছিলেন।
এর আগে সকালে রাজপাড়া থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত ‘হোটেল এক্স’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান। বিতর্কিত এই হোটেলে দুটি কোচিং সেন্টার রাজশাহীর সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল। সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি তা দেখতে গিয়েছিলেন।
এ সময় তিনি দেখেন, হোটেলের দোতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছে। সাংবাদিক আনিসুজ্জামান এর একটি ছবি নিয়ে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকে রাখে। শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করে তার ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ কয়েকজন সাংবাদিক।
তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা আবারও পুলিশের সামনেই সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করে। পুলিশ তখন নির্বিকার ছিল। এ সময় ওই এলাকার এক সন্ত্রাসীকে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই ফোন করে অন্য সন্ত্রাসীদের অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ডাকতেও দেখা যায় ওই সন্ত্রাসীকে।
এ সময় সাংবাদিকরা হোটেলের এক্সের সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্তদের আটকের দাবি জানালে পুলিশ দুজনকে থানায় নেয়। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে গড়িমশি করা এবং উল্টো হোটেল এক্সের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সাংবাদিকরা অভিযোগ তোলেন, ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান হোটেল এক্স থেকে অবৈধ সুবিধা নেন বলে ওই হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। তিনি শুক্রবারের এই ঘটনার পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। তিনি রাজপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি থানায় থাকার যোগ্য নন। তিনি যোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেদিনই এই ওসিকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। কারণ, তিনি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচির কথা তিনি জেনেছেন। পরিস্থিতি দেখতে তিনি থানায় যাচ্ছেন।
সানশাইন / শামি