বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: বাগমারা বিএমডিএ’র কার্যালয়ে কৃষক হয়রানী ও গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএমডিএ বাগমারা কার্যালয়। এভাবে গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে অসহায় কৃষকদের হয়রানী ও কালক্ষেপন করায় প্রতিবাদ করে এর সমাধান দাবী করেছেন কৃষকরা।
গভীর নলকুপ স্থাপনের আবেদনকারী একাধিক কৃষকরা জানান, গত মাসের ৪ তারিখে উপজেলা সেচ কমিটির মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাধিক গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র অনুমোদন করা হয়। আবেদনকারী কৃষকদের মধ্যে যাদের ছাড়পত্র অনুমোদন করা হয়েছে তারা ওই সব ছাড়পত্রের কপি আনতে বাগমারা বরেন্দ্র অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। কিন্তু অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম ও পরিদর্শক জামাল উদ্দিন কৃষকদের নামে অনুমোদনকৃত ছাড়পত্রের কপি দিতে তাদের কাছে বিশ হাজার টাকা করে দাবী করেন। এরই মধ্যে তারা অনেক কৃষকদের কাছে ওই পরিমান টাকা উত্তোলনও করেছেন।
অফিসের এই দুইজন কর্মকর্তা কৃষকদের কাছে টাকা দাবী করে বলেন, তাদের স্যার সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সম্মানী বাবদ এই টাকা দিতে হবে। তা না হলে তাদের নামে ইস্যুকৃত ছাড়পত্র বাতিল বা অন্যের নামে দেওয়া হবে। এতে কৃষকরা শংকিত হয়ে পড়েন। তারা এমন বার্তা নিয়ে এলাকায় গিয়ে অন্যান্য কৃষকদের সাথে ঘুষ প্রদানের বিষয়টি আলোচনা করে টাকা তুলেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ভটখালি, যোগিপাড়া ও হামিরকুৎসার ১০/১২ জন কৃষক জানান, তারা গভীর নলকুপ স্থাপনের জন্য বাগমারা বরেন্দ্র অফিসে আবেদনের পর থেকে পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ওই অফিসের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন ইরিগেশন ফিল্ড পরিদর্শনে এসে দুই দফা মোটা অংকের টাকা নিয়ে গেছেন। টাকা নেওয়ার আগে তিনি তার স্যার সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও উপজেলা সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ভাগ দেওয়া লাগবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে বিলের পানি নেমে যাওয়ায় ইরি বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষকরা নতুন গভীর নলকুপ স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে বরেন্দ্র অফিসের ঘুষখোর সিন্ডিকেট চক্র কৃষকদের পকেট কেটে তাদের সর্বশান্ত করতে ওঠেপড়ে লেগেছেন বলে জানান ভুক্তভোগি কৃষকরা। এ বিষয়ে চাইলে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল মুমিন জানান, গত মাসে তারা কিছু গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্রের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এর জন্য কোন টাকা পয়সার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে সেচ কমিটির নাম করে কেউ টাকা পয়সা দাবী করলে বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বাগমারা সম্পর্ণভাবে কৃষি প্রধান এলাকা। কৃষক ও কৃষি আমাদের প্রাণ। এই কৃষকদের হয়রানী চরম অন্যায়। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জোরালো অনুসন্ধান ও পত্রিকায় লিখার আহবান জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী সেচ কমিটির সদস্য সচিব শাহাদৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখনও তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে যথাযত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি সাইদা খানম বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ পেলে যথাযত তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নিবেন তিনি।