মঙ্গলবার, ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: বিএনপির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির চরিত্র অপপ্রচার চালানো। এরা নানারকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বিআইসিসি) জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ শেষে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি একটা দলের নেতা হয় কী করে? নিজেদের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চেয়ারম্যান করে রেখে দিয়েছে। টাকা পাচার করে তারেক জিয়া সাজা পেয়েছে। পাচারকারী কোকো তো মারা গেছে। তারা আবার অর্থ পাচারের কথা বলে কোন মুখে? সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দল গালভরে বলতে পারে।’
খালেদা জিয়ার বোন ও ভাইয়ের অনুরোধে সাজা স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আমি তাকে এভাবে যে সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু সে কী আচরণ করেছে আমার সঙ্গে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মা ভাইর হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত, এটা স্পষ্ট। গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মী হত্যায় খালেদা জিয়া- তারেক জিয়া জড়িত। আমরা কিন্তু মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাইনি, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওইভাবে কারও ওপর নির্যাতন করিনি। আমরা দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছি।’
এ সসয় তিনি আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর সমবেদনা জানাতে গেলে খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কন্যা। আমাকে কতটা অপমান করেছে সেটা ভেবে দেখেন। তারপরও তার প্রতি দয়া দেখিয়েছি। বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। কারণ, আমরা তো তাদের মতো ছোট মন নিয়ে আসিনি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি।’
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব। বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয়। প্রতি ইঞ্চিতে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ করেন। আমরা কারও কাছে হাত পাতবো না। মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরকারে মাথা উঁচু করে চলবে।’
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছেন ভোগ দখলের জন্য নয়, জনগণের সেবা করার জন্য। আপনারা চাইলে জনগণকে সেবা দিয়ে মন জয় করতে পারেন। চাইলে জনগণের সম্পদ লুট করে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে পারেন। জনগণ আপনাদের সুযোগ করে দিয়েছে, জনগণের সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করে দেশের উন্নয়নে আত্মনিবেশ করবেন। জনগণের সেবা করে তাদের হৃদয় জয় করতে হবে।’
রিজোর্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ কথা আসছে রিজার্ভ রিজার্ভ রিজার্ভ। রিজার্ভের টাকা নাকি সব চুরি হয়ে গেছে। চুরিটা হয় কীভাবে? ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ২ দশমিক ৬ বা ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ পাই। সেটাকে বাড়িয়ে আমরা ৩/৪ বিলিয়নে নিয়ে আসি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ পাই ৫ বিলিয়ন ডলার। সেটা আমরা বাড়িয়ে ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি উঠিয়েছি। করোনার পর শিল্পযন্ত্র, কৃষিযন্ত্র কিনতে ডলার খরচ হয়। আমরা ভ্যাকসিন কিনেছি। সিরিঞ্জ কিনেছি। জরুরি ভিত্তিতে প্লেন পাঠিয়ে ভ্যাকসিন আনিয়েছি। এতে টাকা খরচ হয়নি? টাকা তো খরচ করতে হয়েছে। এভাবে আমরা রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি মানুষের কল্যাণে। করোনা যেতে পারেনি, শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তারপর স্যাংশন। প্রত্যোকটি জিনিসের দাম সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। তেল, চাল, জ্বালানি, গ্যাসসহ সব কিছুর দাম ও এর পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। অতি বেশি মূল্য দিয়ে আমাদের এগুলো কিনে আনতে হবে। টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। মানুষের জন্য খরচ করতে হবে। দাম বাড়ছে বলে তো দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না। যেখানে যত দামই লাগুক। আমরা কিনে নিয়ে আসছি। মানুষকে দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের টাকার ৮ বিলিয়ন ডলার আমরা বিনিয়োগ করেছি। কয়েকখানা আধুনিক বিমান কিনেছি। এটা রিজার্ভের টাকা দিয়ে কিনেছি। এখন বিমান ২ শতাংশ সুদসহ টাকা ফেরত দিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এখন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। এর আগে নির্বাচন মানে কী ছিল, সেটা আপনারা জানেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেন। তিনি বিকেন্দ্রীকরণ করে ক্ষমতাকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেন। মহাকুমাকে জেলায় রূপান্তর করেন। জেলা গভর্নর নিয়োগ দেন। তিনি ঘুনেধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। সেটা তাঁকে সম্পন্ন করতে দেওয়া হয়নি। সেটা পারলে মালয়েশিয়া আর সিঙ্গাপুর দৃষ্টান্ত হতো না, স্বাধীনতার ১০ বছরে বাংলাদেশই বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হতো।’
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য- জনকল্যাণমূলক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। আপনারা যে দল বা মত থেকে নির্বাচিত হন না কেন, আপনার দায়িত্ব কিন্তু সবার জন্য। এলাকার সমস্যা সমাধানসহ মানুষের কল্যাণ নিয়ে ভাবতে হবে। কে ভোট দিলো আর কোন এলাকায় আমার দল সংগঠন, উন্নয়নে সেটা দেখি না। আমরা সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ এখন অবহেলার চোখে দেখে না। আগে তো বাংলাদেশ মানে দুর্ভিক্ষ, ঘুর্ণিঝড় ইত্যাদি ইত্যাদি বলতো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে। মশার প্রাদুর্ভাব। এর থেকে জনগণকে কীভাবে সচেতন করতে হবে, ডেঙ্গুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে এই সমস্যা থাকে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে— ফসল উৎপাদন। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, যাতে আমাদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট না হয়। সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে আমাদের মানুষ। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিতে হবে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না। দেশের মাটি ও মানুষ নিয়ে উন্নতি করতে চাই। জনপ্রতিনিধিদের এই আদর্শ নিয়ে চলতে হবে।’
ভূ-গর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার করার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি এলাকার মজা পুকুর সংস্কার করে পানি ধরে রাখার পরামর্শ দেন। অনেক সময় চেয়ারম্যানরা সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের কাজ দিতে চান না উল্লেখ করে নারী সদস্যদের কাজ দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।