সর্বশেষ সংবাদ :

খড়খড়িতে এবার সওজের সেই জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীর অদূরে খড়খড়ি মোড়ে এবার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অবৈধভাবে ভরাট হওয়া খালে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় কয়েজন ব্যক্তি। স্থানীয় এসব ব্যক্তিরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘর নির্মাণ করলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি স্থানীয় সচেতন মানুষ বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে ভরাট হওয়া খালে নির্মাণ হতে থাকা ঘর উচ্ছেদ এবং খালটি উন্মুক্ত করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত চেয়ে গত ১০ নভেম্বর পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইনজামুল হক নামের একব্যক্তি। অভিযোগের অনুলিপিটি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সওজ (চঃ দা), সড়ক উপ-বিভাগ রাজশাহী, অফিসার ইনচার্জ মতিহার থানা ও সকল প্রেসক্লাবে পাঠানো হয়েছে। যদিও সওজের পক্ষ থেকে আরএমপির মতিহার থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডি ছাড়াও স্থানীয় একব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সওজ সেই খাল ভরাট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর সেটি থানা পুলিশের কাছে পাঠায়। থানা পুলিশ প্রথম দিকে ব্যবস্থা নিলেও পরে অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খড়খড়িতে সওজের জায়গা ভরাট শুরু হতে দেখে জনস্বার্থে স্থানীয় একব্যক্তি অভিযোগ দিলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ শুধু মাত্র দায়সারা ভাবে ৬ টি স্মারকপত্র ইস্যু করে সরকারী সম্পত্তির উপর অবৈধ ও বেআইনী স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে। বিষয়টি দেখার জন্য এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চলতি বছরের ৩ আগষ্ট মতিহার থানার ওসির কাছে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ প্রেরণ করেন। তবে ওই অভিযোগ ও নোটিশ দেওয়ার পরেও অদৃশ্য কোনো কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরজমিনে গেলেও তা দেখা যাবে। সওজ ও থানা পুলিশকে জানানোর পর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়াসহ পাকা স্থাপনা ভাঙ্গা এবং অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের হয়ে জেলা মোবাইল কোর্ট এর অপারেশন চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। এদিকে, পৃথক অপর একটি অভিযোগ পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পবার ৯নং পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া হয়েছে। ১০ নভেম্বর অভিযোগটি করেছেন ইনজামুল হক নামের একব্যক্তি।
সেই অভিযোগ আরো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে স্থানীয় হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন, সোহেল, আহসান আলী বদর ও সাহাবুদ্দীন খড়খড়ি বাইপাস মোড় সংলগ্ন মাংস পট্টির পূর্ব পাশের খাল ৭ শতক (আনুমানিক) জায়গা গত ২৫ মে থেকে ভরাট করা শুরু করে। স্থানীয় মানুষের আপত্তির মুখেও তারা অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাত ও দিনে পর্যায়ক্রমে খালটি ভরাট করে ফেলে। নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকে সেই জায়গার ঘর নির্মাণ শুরু করে। প্রথমে ৯৯৯ এর মাধ্যমে মতিহার থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। এর মাত্র ১ দিন পর থেকে আবারো তারা নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৯ নভেম্বর দুপুরের আগ মুহূর্তে তারা সরকারী জায়গায় থাকা বাঁশ ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে নেয় ও তাদের কেউ কিছু বলতে গেলে তারা মারধর ও বিভিন্নভাবে হয়রানির হুমকি দেয়। ঘর নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। জনস্বার্থে সরকারী সেই জায়গাটিতে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে অপসারণ করা প্রয়োজন।
এদিকে, সওজের পক্ষ থেকে পাঠানো নিষেধাজ্ঞা থানায় পৌঁছালে থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তুহিন বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে থানার এসআই পলাশকে ৩ আগষ্ট নির্দেশনা দেন। নির্দেশনার পর তিন মাস হয়ে গেলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পলাশ কোনো ব্যবস্থা নেননি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘর নির্মাণকারীরা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় রাজিয়া সুলতানা নামের এক নারী বলেন, বিষয়টি সড়ক বিভাগকে জানালেও তারা কোনো সক্রিয় ব্যবস্থা নেয়নি। তারা পুলিশের কাছে যেতে বলছে। থানায় যোগাযোগ করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পলাশ বলেন, এ বিষয়ে কেউ আসলে যাতে ওসি স্যারকে জানানো হয়। সওজ না আসলে এ বিষয়ে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সওজ ও পুলিশ কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয় নিয়ে মতিহার এসআই পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু খাল ভরাটকারীরা নির্মাণ কাজ করে চলেছেন তাই ভালোভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজ কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ওসি স্যার এটা নিয়ে ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সওজ কর্তৃপক্ষ ওসি স্যারের কাছে এসে ব্যবস্থা নিতে বললে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পবার ৯ নং পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, সড়ক উপ-বিভাগ-২ রাজশাহীর শাহ্ মো. আসিফ বলেন, আমরা খড়খড়িতে সওজের খাল ভরাট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি ও মতিহার থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানায় সেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়। এখন যা করার থানা করবে। আমাদের সেভাবে কিছু করার নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিমকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি বলেন, এখন আমাদের কিছু করার নেই। থানার সাথে যোগাযোগ করেন।
তবে মতিহার থানা ইনচার্জ আনোয়ার আলী তুহিন জানান, সওজ কর্তৃপক্ষ এরআগে মাটি ভরাট ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছিল। তখন সাথে সাথেই মাটিভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সওজ আর কোন কিছু জানাইনি।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ | সময়: ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ