শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : উগ্র ও বেপরোয়া জীবন-যাপন করায় মেয়েকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েও শেষ রক্ষা হয় নি। ঘটনার ৮ মাস পর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
রাজশাহীর পুঠিয়া থানা পুলিশ, গত ৫ মার্চ রাতের এ ঘটনায় বাবা-মা ও ভাইকে গ্রেফতার করেছে। তারা মেয়েকে হত্যা করেছিলো বলে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো বাবা হাসানুজ্জামান বাবু (৪৫), মা নাসরিন বেগম (৪০) ও ভাই নাসিমকে (১৮)।
পুলিশ জানায়, পুঠিয়া উপজেলা গন্ডগোহালী গ্রামের হাসানুজ্জামান ও নাসরিনের মেয়ে হোসনেয়ারা প্রান্তি (২০)। উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য বাবা-মা, ভাই মিলে প্রায়ই তাকে শাসন করতেন। তবে ঘটনার রাতে কোনো এক বিষয় নিয়ে তাকে মারধর করতে গিয়ে মারা যায় প্রান্তি। এরপর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তারা এটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চায়। একপর্যায়ে বাবা, মা ও ভাই মিলে প্রান্তির লাশ বাড়ির বাইরের আমগাছের ঝুলিয়ে রাখেন।
পুলিশ জানায়, ৮ মাস আগে প্রান্তির মৃত্যুর পর আত্মহত্যা বলে পরিবার প্রচার করলেও সেটি আত্মহত্যা ছিলো না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার বাবা, মা ও ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি সোহরাওয়াদী হোসেন জানান, এরই মধ্যে তারা প্রান্তির ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাপ্তির আত্মহত্যা নয়, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়। থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই প্রান্তির ভাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। তবে এখনো তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ওসি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা বলছেন তাদের মেয়েটি বড় হওয়ার পর থেকেই উগ্র জীবনযাপন করতেন। এ কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করেন। এর একপর্যায়ে মেয়েটি মারা যান। এরপর তার মরদেহ বাইরের আমগাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। যেন সবাই ভাবে প্রাপ্তি আত্মহত্যা করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ পুলিশ প্রাপ্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই সময় এ ঘটনায় পুঠিয়া থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছিল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রান্তি গত বছর পরিবারের অমতে পালিয়ে গিয়ে পৌর এলাকার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে জিয়ারুল ইসলামকে বিয়ে করেছিলো। কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করায় উভয় পরিবার তাদের এই বিয়ে মেনে নেয়নি। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে প্রাপ্তি বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। এরপর গত ৫ মার্চ রাতে বাবা, মা ও ভাই মিলে প্রান্তিকে হত্যা করে মরদেহ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।