সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সাত বছরের শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে একটি আদালত। রোববার দুপুরে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন বলে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আশিকুর রহমান সুজন জানান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ধুনট উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বাপ্পি আহম্মেদ (২৪), কামাল পাশা (৩৭), শামীম রেজা (২৪) এবং লাভলু শেখ (২৩)। মামলার বরাত দিয়ে আইনজীবী বলেন, নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকন ও তার স্ত্রী মরিয়ম ডেইজি ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তাদের মেয়ে মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম বাড়িতে দাদা-দাদীর সঙ্গে থাকত। সে পাঁচথুপি-নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর গ্রামের কবরস্থান চত্বরে দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। শিশু তাবাচ্ছুম তার দাদা ও ফুফুর সঙ্গে সেই মহফিলে যায়। রাত ১০টার দিকে সে মিষ্টি কিনতে মঞ্চের পাশের দোকানে যায়। সেখান থেকে বাপ্পি আহমেদ বাদাম কিনে দেওয়ার কথা বলে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
বাপ্পির সঙ্গে তাবাচ্ছুমের পরিবারের আগে থেকেই বিরোধ ছিল। বাপ্পি সেই প্রতিশোধ নিতে তাবাচ্ছুমকে হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে বাপ্পি ও তার তিন বন্ধু কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাবলু শেখ শিশুটিকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করে।
কোনো প্রাণী কামড়ে হত্যা করেছে এমনটা যাতে ধারণা হয় সেজন্য আসামিরা প্লাস দিয়ে শিশুটির হাতের একটি আঙুল কেটে দেয়। পরে মরদেহ কবরস্থানের কাছে বাদশা মিয়ার বাঁশঝাড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ সেদিনই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর তাবাচ্ছুমের বাবা খোকন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
আইনজীবী আশিকুর রহমান সুজন বলেন, ওই ঘটনায় পুলিশ বাপ্পির সঙ্গে খোকনের পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করে। বাপ্পি ও তার তিন বন্ধুকে পর্যবেক্ষণে রাখে পুলিশ। ২৫ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে বাড়ি থেকে শামীম রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বাপ্পি, রেজা ও লাবলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর চার আসামিকে অভিযুক্ত করে ধুনট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আইনজীবী আরও বলেন, চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আদালত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। রায়ে তাবাচ্ছুমের পরিবার সন্তোষ্ট। তারা রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চায়। আসামি পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “এই রায়ে আমরা খুশি না। আমরা উচ্চ আদালতে আপিলে যাব।”