বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: হাসপাতালে হামলাকারিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শুক্রবার কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে কাজের ফেরার ঘোষণা দেন তারা। ওই বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ছাড়াও সকাল বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে তারা কাজে যোগ দিবেন।
বৈঠক শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। সে মামলায় হামলাকারিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে শনিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, চিকিৎসকদের উপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে রাজপাড়া থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক ছাত্রকে অজ্ঞাত আসামী হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কিভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়াও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তারা লাশ নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু হাসপাতালে হামলা হয়েছে এবং ভাঙচুর করা হয় তাই পরিবর্তি সেপ্টির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি মামলা করে রাখা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার দিবাগত রাতে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কর্মবিরতীতে যায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রাত ১১টার দিকে কর্মবিরতি করে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয় তারা। পরে রাত ১২টার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করার আগে সাংবাদিকদের সামনে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরাম হোসেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের দাবি, হাসপাতালে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বিষয় নিয়ে রাতে বৈঠকে বসে কর্তৃপক্ষ। রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহরিয়ারের চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তদন্তে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাত ৮টার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের চারতলার ছাদ থেকে পড়ে আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে পৌনে ১ঘন্টা হাসপাতালে থাকলেও শাহরিয়ারকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়ে দুই চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় হাসপাতালের আনসার সদস্য ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে রাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৫ রাবি শিক্ষার্থী আহত হন।
এদিকে, চিকিৎসায় অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি এবং আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবিতে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয় রাবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা তিন দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করে। রাত ২টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আশ^াসে হাসপাতাল ত্যাগ করেন রাবি শিক্ষার্থীরা।