রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আক্কেলপুর প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুলিশ সদস্য স্বামী ও শ^াশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সুমাইয়া বানু (১৯) নামের এক গৃহবধূ। তার পিতা ও চাচার মাধ্যমে উদ্ধারের পর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের কাঠালবাড়ি গ্রামে ঘটেছে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও তার মা উপজেলার ওই গ্রামের আবু কালাম মন্ডলের ছেলে সজীব হোসেন (২৬) ও তার স্ত্রী মাহফুজা (৪৫)। তিনি নারায়নগঞ্জ জেলায় শিল্প পুলিশে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে আহত, আহতের পরিবার, স্থানীয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সজীব হোসেনের সাথে ২০২০ সালে পাশর্^বর্তী তিলকপুর ইউনিয়নের কয়াশোবলা গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া বানুর (১৯) বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকেই যৌতুক, সহ নানা কারণে ওই পুলিশ সদস্য ও তার মা আহত সুমাইয়া বানুকে মারধরসহ নানা ধরণের নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। সবশেষ গত সোমবার ওই পুলিশ সদস্য ছুটিতে বাড়িতে এসে তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আবারো মারধর করে বাড়িতে হাত বেধে আটকে রাখে।
প্রতিবেশীদের মাধ্যমে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে থানায় অভিযোগ করে ও আহত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। আহত সুমাইয়ার ১১ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই পুলিশ সদস্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ইতোপূর্বেও তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিশ হয়েছে। তার স্ত্রীর করা পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগে ভিত্তিতে বর্তমানে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।
আহত সুমাইয়া বলেন, ‘আমার স্বামী ও শ^াশুড়ি বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে। আমার পেটে বাচ্চা আসায় সেই সময় আমার পেটে লাথিও মেরেছিল। বর্তমানে সে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত আছে।
অফিস থেকে ছুটি পাওয়ার দুইদিন পরে বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলে ও তার মোবাইল ফোন দেখতে চাইলে হাত থেকে মোবাইল পড়ে যাওয়ায় আমাকে মারধর শুরু করে। এ কারণে শ^শুড় বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলে আবারো ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ও ফল কাটা চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, হত্যার হুমকি দেয় ও পূর্বের সিজারের সময়ের সেলাই দেওয়া জায়গায় লাথি মারে। আমার বাবার বাড়ির লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়’।
এবিষয়ে ঘটনার দিনেই ওই পুলিশ সদস্যের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলে তিনি বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন ও আক্কেলপুর থানা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তবে মারধরের বিষয়টি আহতের শ^াশুড়ী মাহফুজা অস্বীকার করেন।
স্থানীয়রা জানায়, সুমাইয়ার শ^াশুড়ীর কারণের তাদের সংসারে এমন ঝামেলা সবসময় হয়। ওই ছেলে এসে তার স্ত্রীকে মারধর করে। আমরা প্রতিবেশীরা কিছু বলতে গেলে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আহতের চাচা আবুল কালাম জানায়, ‘আমার ভাতিজিকে স্বামী ও মা বিভিন্ন সময় নানাভাবে নির্যাতন করে। সর্বশেষ আজ তাকে হত্যার জন্য মারধর করে ঘরে বেধে রাখে। স্থানীয়রা খবর দিলে আমি ও আমার ভাই থানা পুলিশে খবর দিয়ে তার শ^শুড় বাড়িতে গিয়ে আমার ভাতিজিকে উদ্ধার করি। ঘরের মধ্যে তাকে বাধা অবস্থায় পাই’।
আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ‘এঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।