সর্বশেষ সংবাদ :

দলের পরাজয়, ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ সাকিব

স্পোর্টস ডেস্ক: নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ কোথায় ম্যাচটা হারলো তা খোঁজার চেয়ে কোথায় উন্নতি হয়েছে, সেটা বের করাই শ্রেয়! এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের আশার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় প্রথম ইনিংস শেষেই। বোলারদের এলোমেলো বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডের রান যখন ২০৮ তখন বাংলাদেশের ডাগ আউটে পরাজয় উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু তারপরও ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছেন।
বিশেষ করে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে লড়াই করা সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে। তার ব্যাটিং আশা দেখিয়েছে, বাকিরাও যদি একটু চেষ্টা করেন, নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব। নিউ জিল্যান্ডের দেওয়া ২০৮ রানের জবাবে সাকিবের ৪৪ বলে ৭০ রানের ইনিংসের পরও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ৪৮ রানে। নিউ জিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস ২৪ বলে ৬০ রান করেছেন ২ চার ও ৫ ছক্কায়।
বেসবল প্রতিযোগিতা থেকে ক্রিকেটে আসা ফিলিপস মাঠের চারপাশে বল উড়ান শরীরের জোরে। সেই জোরটা সাকিবের নেই। আছে কেবল ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক। সেই মস্তিষ্কতেই ক্রিকেটীয় সব শট খেলে সাকিব রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। যেমনটা করেছেন ডেভন কনওয়েও। তার ৪০ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে যতগুলো স্কোরিং শট ছিল প্রতিটি ক্রিকেটের সব ব্যাকারণ মেনে। আলগা বল পেলেই বোলারদের শাস্তি দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে যারা শুধুমাত্র পেশীর খেলা বলে থাকেন তারা হ্যাগলি ওভালে দুই রকম চিত্রই দেখেছেন। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের থেকে আরও প্রত্যাশা বেশি ছিল। নাজমুল হোসেন শান্ত দুইবার জীবন পাওয়ার পরও ১১ রানের বেশি করতে পারেননি। লিটন ১৬ বলে ২৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন দ্রুত। প্রতি ম্যাচে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ভালো শুরু পাচ্ছেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারছেন না। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে যাওয়ার আগে যা বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো খবর নয় নিশ্চয়ই।
প্রায় এক বছর পর দলে ফেরা সৌম্য সরকার আজ অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনও কিছু না করেই ফিরেছেন জাতীয় দলে। সুযোগ পেয়ে কেমন করেন সেটা ছিল দেখার। শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে না পারায় তার ইনিংস তেমন কাজে আসেনি। ১৭ বলে ২৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন এক আকাশ হতাশা নিয়ে।
তিনের জায়গা ছেড়ে চারে নামা সাকিব ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে এগিয়ে নিয়েছেন ইনিংস। ৩৩ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর রানের গতি আরও বাড়িয়ে দেন। আলগা বল শাসন করেছেন। ভালো বলে ১-২ রান নিয়েছেন। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ছায়া হয়েই আছেন। হ্যাগলি ওভালের একপাশ বড়। আরেকপাশ ছোট। স্বাগতিকরা নিয়মিত বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির পাশাপাশি সিঙ্গেল ও ডাবলসে মনোযোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে ফাঁকা জায়গায় বল পাঠিয়ে অনায়াসে ডাবলসে রানের গতি স্থির রেখেছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে কেবল চার-ছক্কার খেলা নয় সেটাও স্বাগতিকদের ইনিংসে ফুটে ওঠে। তবে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার বড় কারণ হতে যাচ্ছে পেস বোলিং। নিউ জিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার এমন উইকেটে শর্ট বল করলে প্রচণ্ড গতি থাকতে হয়। কিন্তু সেই গতির অভাব বাংলাদেশের পেস স্কোয়াডে। আবার লেন্থ বলে বৈচিৎর‌্যর ঘাটতিতে ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাচ্ছে। তবে থ্রি কোয়ার্টার ও ফুলার লেন্থ ডেলিভারিতে নিজেদের শক্তিশালী করতে পারলেই মিলবে সাফল্য। ইবাদত, শরিফুল চল্লিশের বেশি রান দিয়েছেন। সাইফ উদ্দিন দিয়েছেন ৩৭।
পেসারদের আরও চিত্তাকর্ষক হতে জ্বলে উঠতে হবে অতি দ্রুত। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ যে লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিল তা পূরণ হয়নি। তিন ম্যাচে তিনটিতেই হার। শেষ ম্যাচে আগামীকালই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। জয়ে শেষটা রাঙাতে পারে কি না সেটাই দেখার। অন্তত একটি জয় নিয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে গেলে প্রবল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে সাকিব অ্যান্ড কোং।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২২ | সময়: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ