স্বামী-স্ত্রীসহ চার জন নিহতের ঘটনায় কাঁদছে বড়াইগ্রাম

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: কনের বাড়ি থেকে নববধুকে নিয়ে বরযাত্রীরা ফিরছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় বরের বাড়িতে। গাড়ির মধ্যে ছোট বড় সবাই মিলে আনন্দেই সময় কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু মারাত্নক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও একই পরিবারের শিশুসহ ৯ জনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নিমেষেই সব আনন্দ বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি নববধু ও বরের বাসর রাত কেটেছে হাসপাতালে আহতদের সেবা-শুশ্রুষায়। মঙ্গলবার বরের বাড়িতে বৌভাতের কথা থাকলেও সব আয়োজন এক মুহুতের্ই স্থবির হয়ে গেছে।
জানা যায়, সোমবার রাতে মানিকগঞ্জে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর বনপাড়া এলাকার সিয়াম হোসেন টুটুল ও তার নববধুকে নিয়ে বরযাত্রীরা দুটি মাইক্রোবাসে ফিরছিলেন। পথে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাঔল ব্রিজ এলাকায় বর-বধুকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি এগিয়ে গেলেও বরযাত্রীবাহী পেছনের মাইক্রোটি রাস্তার উপরে বিকল হয়ে থাকা তৃষা পরিবহণকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিয়ের সাথে সজোরে ধাাক্কা খায়। সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রাজু আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন-বরের ভগ্নিপতি বড়াইগ্রামের বনপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৫০) ও তার স্ত্রী পান্না বেগম (৪৩), মাইক্রোবাস চালক মাঝগ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে সেলিম হোসেন (৩৫) ও কণের আত্নীয় মানিকগঞ্জের রফিকুল ইসলাম (৪৫)। আহতদের মধ্যে শিশু মাফি (৮) ও শাফি (৫) কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় এবং অধ্যাপক ওয়ালিউর রহমান জুয়েল ও তার স্ত্রীর সহকারী অধ্যাপক আজমিরা খাতুন হিরা (৪৫), দুই ছেলে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র লাবিব (১৭) ও গালিব (১৫) সহ সাতজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে বনপাড়ায় বর সিয়াম হোসেন টুটুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সবাই শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে ডেকোরেশনসহ বিয়ের কোন আলামতই নেই, যেখানে গান-বাজনাসহ হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকার কথা সারা পাড়া, সেখানে পুরো এলাকা জুড়ে যেন শুনশান নীরবতা। বাড়ির কোন সদস্যই বাড়িতে নেই, বিয়ে উপলক্ষ্যে যারা বেড়াতে এসেছেন তাদেরই কিছু লোকজন বাড়িতে হা-হুতাশ করছেন। আর স্বজনরা সবাই নিহতদের লাশ গ্রহণ আর আহতদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহী-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটাছুটি করছেন। আনন্দের পরিবর্তে পুরো এলাকা জুড়ে বিষাদে ছেয়ে গেছে।
এ সময় বরের নিকটাত্নীয় পাশের কুমরুল গ্রামের আশরাফ উদ্দিন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বাড়িতে বৌভাতের আয়োজন করা ছিলো। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা শুধু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাই নয়, পুরো পরিবারটিকে এলোমেলো করে দিয়েছে। এ শোক তারা কিভাবে কাটিয়ে উঠবে কিছুই বুঝতে পারছি না। বিশেষ করে বাড়ির চারজন শিশু সন্তানের অবস্থা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক, তাদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।
বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএম জাকির হোসেন বলেন, একই সঙ্গে চারজন মানুষের মৃত্যু এবং আরো ৯ জন গুরুতর আহত হওয়ায় বিয়ের আনন্দ মুহুর্তেই বিষাদে রুপ নিয়েছে। একটি পরিবারের জন্য এর চেয়ে বড় আঘাত আর কিছু হতে পারে না।


প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ | সময়: ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ