শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: আট বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ, ১৮ বছর পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় সফর। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য বড় এক উপলক্ষ। কিন্তু ম্যাচটি তারা স্মরণীয় করে রাখতে পারল না। লড়াইয়ের আভাস যদিও ছিল কিছুটা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যাটিং ভেঙে পড়ল ক্যামেরন গ্রিন আর অ্যাডাম জ্যাম্পার ছোবলে। প্রত্যাশিত জয়ে নতুন মৌসুমের শুরু করল অস্ট্রেলিয়া।
টাউন্সভিলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৫ উইকেটে। টনি আয়ারল্যান্ড স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ের শুরু আর শেষে ভালো জুটি গড়লেও শেষের ব্যাটিং ধসে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ২০০ রানে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটের স্বাদ পেতেই যার লেগে গিয়েছিল ৭ ম্যাচ, সেই ক্যামেরন গ্রিন অষ্টম ম্যাচে নিলেন ৩৩ রানে ৫ উইকেট! এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারেও প্রথম ৫ উইকেট এটি।
১০ ওভারে ৫৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন জ্যাস্পা। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে বেশ খরুচে মনে হতে পারে এই লেগ স্পিনারকে। তবে তার প্রতিটি উইকেটই ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়া খুব মসৃণ হয়নি। বড় কোনো ইনিংস বা জুটি তারা পায়নি। তবে জিততে সমস্যাও হয়নি। ডেভিড ওয়ার্নারের ফিফটি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ছোট্ট এক বিধ্বংসী ইনিংসে তারা জিতে যায় ৯৯ বল বাকি রেখে।
এই ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিল ২০১৪ সালে অগাস্ট। সেদিনের একাদশ থেকে কেবল সিকান্দার রাজা ছিলেন এবারের ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার একাদশে আছেন ৫ জন। এই ম্যাচ দিয়ে ৮ বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেট ফিরল কুইন্সল্যান্ডের উত্তর-পূর্বের সৈকত শহর টাউন্সভিলে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়েকে মোটামুটি স্বস্তির শুরু এনে দেন ইনোসেন্ট কাইয়া ও টাডিওয়ানাশে মারুমানি। মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউডদের সামলে ১০ ওভার নিরাপদে কাটান তারা। ৪২ রানের জুটি থামে একাদশ ওভারে মিচেল মার্শের বলে কাইয়া (১৭) ফিরতি ক্যাচ দিলে। দ্বিতীয় উইকেটে মারুমানির সঙ্গে জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ম্যাচে জ্যাম্পার প্রথম ছাপ এই জুটিকে থামিয়েই। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে মারুমানি ৪৫ রানে বোল্ড হলে শেষ হয় ৪৫ রানের জুটি।
জ্যাম্পা পরে বিদায় করেন টনি মুনিয়োঙ্গাকে, গ্রিন প্রথম শিকার ধরেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে। ১২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন হঠাৎই নড়বড়ে জিম্বাবুয়ে। মাধেভেরে টিকে ছিলেন তখনও। এবার রেজিস চাকাভার সঙ্গে তার শুরু হয় ইনিংস গুছিয়ে নেওয়ার কাজ। ৭০ বলে ৬৩ রানের দারুণ জুটি গড়েন দুজন।
৯১ বলে ৭২ রান করা মাধেভেরেকে থামিয়ে এই জুটিও ভাঙেন জ্যাম্পা। এরপর গ্রিন হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্কর। জিম্বাবুয়ের ইনিংস ভেঙে পড়ে যেন চোখের পলকে। নিজের পরপর দুই ওভারে দুটি করে উইকেট নেন গ্রিন। স্রেফ ১৫ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ে হারায় শেষ ৬ উইকেট। রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ আউট হন ১৫ রানে। দলের রান ততক্ষণে ৪৩ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ দলকে এগিয়ে নেন আরও।
ওয়ার্নার ৩৫ রানে সিকান্দার রাজার বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েও রক্ষা পান। ওই ওভারেই ঘটে বিচিত্র এক ঘটনা। রাজার বলে জোরাল কটবিহাইন্ডের আবেদনে ‘নট আউট’ দেন আম্পায়ার। জিম্বাবুয়ে রিভিউ নেয়। টিভি রিপ্লে দেখে ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা দেন আউট হয়েছেন ভেবে। কিন্তু বারবার দেখেও মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলানোর পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়ায় ‘নট আউট’ রেখে দেখে টিভি আম্পায়ারও। ওয়ার্নার আবার ছুটে ক্রিজে ফিরে চালিয়ে যান ব্যাটিং।
রাজার পরের ওভারেই ছক্কা মারার পর ওয়ার্নার ফিফটি করেন ৫৭ বলে। শেষ পর্যন্ত রাজার বলেই ৫৭ রানে বোল্ড হন ওয়ার্নার। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ। তিনে নামা স্টিভেন স্মিথ এক প্রান্ত আগলে দলকে ভরসা জুগিয়ে যান। সাতে নেমে ম্যাক্সওয়েল তিনটি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৩৩ করেন স্রেফ ৯ বলে। স্মিথ অপরাজিত থাকেন ৮০ বলে ৪৮ রান করে। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে ১৩ ম্যাচে ৮ জয়ে অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট হলো এখন ৮০। ১৯ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট জিম্বাবুয়ের। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বুধবার।