রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষ। দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দায়ী করছেন মিল মালিকদের কারসাজিকে। আর মিল মালিকদের দাবি, লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেল দিয়ে চালকল চালু রাখায় খরচ বাড়ছে। আবার বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় কৃষকও ধান বিক্রি করছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
অন্যদিকে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও চালের দাম বৃদ্ধিতে বিস্মিত খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার মানসিকতার সমালোচনা করে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন। জানা গেছে, যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদিন বাড়ছে মোটা, সরু সব ধরনের চালের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারিতে ৩ থেকে ৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। কয়েক হাত ঘুরে এই চাল কিনতে গিয়ে খুচরা ক্রেতাদের উঠছে নাভিশ্বাস।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যার কারণে এ বছর হাওরে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যান্য এলাকায়ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ কমেছে। ফলে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন কম হওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে ডলার সংকটের কারণে আমদানিতেও গতি নেই। বাড়তি দামে এখন বড় চালানে চাল আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এসব চাল ৫ থেকে ৬ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে।
পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। আটাশ চাল প্রতিকেজি ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। পাইজাম ৫০ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাস্কি চাল ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩ হয়েছে। মোটা স্বর্ণা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মিল মালিকদের বিকল্প উপায়ে ধান থেকে চাল করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে আমদানি কম হচ্ছে। যেটুকু বাজারে এসেছে, সেটাও দেশি চালের দামের প্রায় সমান।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের কারণে যে শুধু ভাড়া বেড়েছে তা নয়। চাল প্রক্রিয়াকরণের খরচও বেড়েছে। সেজন্য মিলগেটে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সামনে দাম আরও বাড়বে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের চাল গুটি স্বর্ণা। এই মোটা চালও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা।
শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাউসার বলেন, তেলের দামের জন্য সব কিছুর দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দামও বেশি ফলে সরকার আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি কম হচ্ছে। ফলে বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর মিল মালিকদের কাছে যে চাল আছে সেটা বেশি দামের আশায় বাজারে ছাড়ছে না। তাই সরকারকে মজুত পরিস্থিতি ও নতুন চাল না ওঠা পর্যন্ত মানে আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত কী পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেটার হিসাব করতে হবে।
এ বিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, এ বছর বোরোতে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। সেজন্য সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বাজারে ভারতের চাল এখনো আসেনি। এ পর্যন্ত যা এসেছে তা মিল মালিকদের কাছে আছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের কারণে ট্রাকভাড়া বেড়েছে। আগে যেখানে কুষ্টিয়া থেকে ১৭ হাজার টাকায় বড় ট্রাক আসতো, সেটা এখন ২৫ হাজার লাগছে। একটি বড় ট্রাকে ২৫০ বস্তা চাল আসে। বাড়তি ভাড়ার কারণে প্রতি কেজি চালে প্রায় ৫০ পয়সার বেশি খরচ হচ্ছে।
এদিকে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ, মিল মালিকেরা কারসাজি করে চালের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহন খরচ। এসব কারণেই মূলত চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, গত বছর যেখানে আম্পানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, প্রকিউরমেন্ট হয়নি, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত ছিল মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন সেখানেও চালের দাম বৃদ্ধি করতে দেওয়া হয়নি। আর বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মজুদ ২০ লাখ টন। তারপরও এ বছর চালের দাম বাড়ছে। যারা অবৈধ মজুদ করে চালের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুদ করে রাখতে পারবে না। যারা অবৈধভাবে মজুত করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।