মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
লাবু হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ১৫৯ নম্বর কক্ষে। জীবনে একবার নিজের মোবাইল সার্ভিসিং করতে গিয়ে প্রতারিত হন তিনি। মোবাইলের সামান্য যন্ত্রাংশ মেরামতের জন্য সার্ভিসিং সেন্টারে তার থেকে আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। বিষয়টি বুঝতে পেরে সামছুল মনে মনে প্রতীজ্ঞা করেন পরবর্তীতে অন্যদের এমন প্রতারণার শিকার হতে দেবেন না তিনি।
সেই প্রতীজ্ঞা থেকে নিজেই শিখে নিয়েছেন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ। বর্তমানে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে হলেই করছেন মোবাইল সার্ভিসিং। বিষয়টি পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সাড়াও ফেলেছে ব্যাপক। হল কক্ষেই মোবাইল সার্ভিসিং করে বর্তমানে প্রতিমাসে সামছুলের আয় ৬০ হাজারের অধিক। পাশাপাশি হলের অনেকের কাছেই তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন ‘মানবিক ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে।
এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগের শুরুর গল্পে সামছুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সামছুলের শেখার আগ্রহ ছিল প্রকট। হাতের কাছে খেলনা গাড়ি, গাড়ির রিমোট, টিভির রিমোট বা মোবাইল ফোন থাকলে সেটি খুলে দেখতেন। এসবের ভিতরের যন্ত্রাংশগুলোর কার্যপ্রণালি সম্পর্কে সবসময় বুঝার চেষ্টা করতেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের থেকে এজন্য বকুনি খাওয়া সত্ত্বেও থেমে যায়নি সামছুল। এখন বাসার সকল প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ নিজেই মেরামত করেন তিনি।
সার্ভিসিং শেখার বিষয়ে সামছুল বলেন, একবার নিজের মোবাইল সার্ভিসিং করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হই। পরে আক্ষেপ নিয়ে পুরো করোনাকালের সময়টা জুড়ে নিজ বাসা নারায়ণগঞ্জের একটি সার্ভিসিং সেন্টার থেকে এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের যাবতীয় কাজ শিখে নিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শেখার বিষয়টি নিয়ে যদিও আমাকে অনেকে তিরস্কার করেছিলেন। তবে আমি তাদের কথায় কখনও কান দেইনি। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও আমি সবসময় সার্ভিসিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব। আমি চাই আমার মতো যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয়।
বর্তমানে মোবাইল সার্ভিসিং করে দৈনিক ২ হাজার টাকার বেশি আয় করেন জানিয়ে সামছুল ইসলাম বলেন, মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করায় বর্তমানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মোবাইলের ছোট-খাটো সমস্যা হলে আমি বিনামূল্যেই ঠিক করে দিই। গ্রাহকদের থেকে এ পর্যন্ত খারাপ মন্তব্য পাইনি। বর্তমানে দিনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হয়। কয়েকমাস আগে বাসায় দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছি। এ মাসেও ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এছাড়া কেউ বিপদে-আপদে পরলে পাশে থাকার চেষ্টা করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী চাইলে বিনামূল্যে কাজ শেখাবেন সামছুল। তিনি বলেন, আজকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হয়, বাংলাদেশে কেনো হয় না? কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের শেখার ও জানার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির দিকে আগ্রহ কম। প্রযুক্তির দিকে যদি আগ্রহ থাকত তাহলে বাংলাদেশেও ফেসবুক, গুগল এবং আমাজনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত। আমি চাই আমাদের দেশের তরুণরা প্রযুক্তির দিকে আগ্রহী হোক। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে চাইলে, আমি বিনামূল্যে শেখাব। তবে তাকে সময় ও শ্রম দিতে হবে।
সামছুলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো শিক্ষার্থী যদি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ভিন্নধর্মী কিছু করে তাহলে সেটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। নিজের বাবা-মায়ের থেকে সবসময় টাকা নিয়ে অনেককিছুই করা যায় না। শিক্ষার্থীরা যদি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিজের অবসর সময়গুলো আয়ের পথে ব্যয় করতে পারে তাহলে পরিবারের চাপ কমবে, পাশাপাশি সেই শিক্ষার্থীও দক্ষতা অর্জন করবে। যেটি তার সুসময় এবং দুঃসময়েও কাজে লাগবে।