শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মান্দা প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় মাদক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে দখলবাজ ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন সড়ক দুর্ঘটনায় পুঙ্গুত্ববরণ করা এক ব্যক্তি। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। মামলার মাত্র ১২ দিন পর পুলিশের যোগসাজশে বিতর্কিত একটি মাদক উদ্ধারের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
পত্তন নেওয়া দোকানঘর দখল করতে তাকে এভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে দখলকারী কির্তলী গ্রামের বাসিন্দা সাহাবুদ্দীন খাজা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম আনিছুর রহমান (৪৮)। তিনি কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। দেলুয়াবাড়ি বাজারের পেঁয়াজপট্টি এলাকায় পত্তনকৃত ১০ বর্গফুটের জায়গায় তার একটি দোকানঘর রয়েছে। সেই ঘরটি দীর্ঘদিন ধরে দখল নেওয়ার পাঁয়তারা করে আসছিলেন দখলবাজ সাহাবুদ্দীন খাজা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মান্দা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আনিছুর রহমানের স্ত্রী নারগিস আক্তার ও তার সন্তান নাঈম আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর স্ত্রী নারগিস আক্তার বলেন, দেলুয়াবাড়ি বাজারের পেঁয়াজপট্টিতে পত্তন নেওয়া জমিতে স্থাপনকৃত দোকানঘরটি পারিবারিক কারণে গাইহানা গ্রামের মোজাম্মেল হক নামে একব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমাদের না জানিয়ে তিনি গোপনে দোকানঘরটি কির্তলী গ্রামের সাহাবুদ্দীন খাজাকে ভাড়া দেন। গত ১৮ জুলাই দোকানঘরের ভাড়া নিতে গেলে সাহাবুদ্দীন খাজা ভাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নারগিস আক্তার আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মান্দা থানায় অভিযোগ করেন আমার স্বামী আনিছুর রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছে ভাড়াটিয়া সাহাবুদ্দীন খাজা ও তার লোকজন মাদক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এতে ভীত হয়ে আমার স্বামী গত ৭ আগস্ট নওগাঁ আদালতে ভাড়াটিয়া সাহাবুদ্দীন খাজাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।’
ভুক্তভোগীর ছেলে নাঈম আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, এ মামলার মাত্র ১২ দিনের মাথায় আমার বাড়িতে অভিযান দেয় পুলিশ। বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা থেকে চোলাইমদ উদ্ধার দেখিয়ে নাটক সাজিয়ে আমার পুঙ্গুবাবা আনিছুর রহমানকে আটক করা হয়। এসময় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা তিন আত্মীয়কে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাবা আনিছুর রহমানের দায়ের করা মামলার আসামি দুলাল হোসেনকে মাদক মামলার প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ প্রকৃত সত্য উদঘাটনের পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম, নিরঞ্জন কুমারসহ আরও অনেকে জানান, ‘আনিছুর মাদকের ব্যবসা করেন এমনটি আমাদের জানা নেই। তার বাড়িতে মাদকের আসর বসানো হতো এটিও সঠিক হয়। দোকানঘরটি দখল নিতে দখলবাজ সাহাবুদ্দীন খাজা ও তার ছেলে শরিফ উদ্দিনের এটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।’
এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া সাহাবুদ্দীন খাজার ছেলে শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘দোকানঘরটি মোজাম্মেল হক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার উপপরিদর্শক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘দেলুয়াবাড়ি বাজারে সাহাবুদ্দীন খাজার পেঁয়াজের আড়তঘরে তালা লাগানো হয়েছে ৯৯৯ থেকে এমন ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তঘর তালাবদ্ধ দেখে চাবি নিতে আনিছুর রহমানের বাড়ি গিয়েছিলাম।
এসময় আনিছুর রহমানের বাড়ির পেছনে তল্লাশি করেন কনস্টেবল মাহাবুব। সেখানে প্লাস্টিকের ছোটবোতলে কিছু চোলাইমদ পাওয়া যায়। পরে তাদের আটক করে মাদকের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।