মঙ্গলবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: দেশব্যাপি ভয়ানক ভাবে পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে মোটরসাইকেল চালক সহ জ্বালানী নির্ভর অন্যান্য যাহবাহনের মালিক ও যাত্রীরা। জ্বালানী নির্ভর এসব যানবাহন ব্যবহার করে আয়ের তুলনায় এখন ব্যায়ের পরিমান বেশি হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা।
মামুনুর রশিদ মামুন একটি ওষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি দশ বছরের বেশি সময় ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। যাতায়াত সহ সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান। প্রতিদিন তাকে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে ঔষধ বিক্রির তদারকি করতে হয়। এতে তার মাসে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। মাস শেষে মামুনের হাতে থাকে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
তবে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন তেল বাবদ মামুনকে মাসে খরচ করতে হবে ১৬ থেকে ১৭ হাজাার টাকা। এই তেল খরচ বাদে তার হাতে থাকবে বেতনের মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তার তিন বেলা খাওয়া সহ সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হবে। শুধু পেট্রোলের দামই নয় বেড়েছে মবিলের দামও। আগের ৪শ টাকার মবিল এখন ৬শ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
মামুন জানান, পেট্রোলের দাম বাড়ার আগেও সংসার ঠিকমত চালাতে পারতাম না। নিত্যপন্যের দাম লাগামহীন বেড়েই চলেছে। এখন নির্ধারিত বেতনের ওপর বাড়তি ৮ হাজার টাকার চাপ সামলাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। শুধু মামুনই নয়। এমন হাজারো মানুন পেট্রোলসহ জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন। আরেক কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানান একই কষ্টের কথা।
তিনি রাজশাহী থেকে প্রতিদিন মোটরসাইকেলে এসে বাগমারা সহ আশেপাশের আরো চারটি উপজেলায় ওষধ বিক্রির তদারকি করেন। রোদ ঝড় বৃষ্টি সকল বাঁধা উপেক্ষা করে তাকে ছুটতে হয় মাইলের পর মাইল।
মিজান জানান, পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির আগে প্রতিদিন তাকে জ্বালানী বাবদ খরচ করতে হতো ১৭০ থেকে ২৬০ টাকা। এখন লিটারে ৪৪ টাকা দাম বাড়ায় এই বাবদে প্রতিদিন অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
সম্প্রতি বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় এমন অনেক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধির সঙ্গে। তারা জানান তাদের অহসায়ত্বের কথা। সারাদিন গাধার মত খেটে দিন শেষে প্রায় খালি হাতে বাড়ি ফেরার কষ্টের কথা। পেট্রোল সহ সব ধরনের জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে মোটরসাইকেলের দামও। ভবানীগঞ্জের মেসার্স শিবলী মোটরর্সের স্বত্বাধিকারী অধ্যক্ষ আতাউর রহমান শিবলী জানান, জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার শোরুম থেকে মোটরসাইকেল বিক্রির পরিমানও কমে গেছে।
এদিকে পেট্রোল সহ জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মোটরসাইকেল চালক সহ বিপাকে পড়েছেন সিএনজি আটোরিক্সা সহ বাসের যাত্রীরা। বাগমারা থেকে রাজশাহী যাতায়াতকারী এসব যানবাহনের যাত্রীরা জানান, সরকার যে হারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেছে সেই তুলনায় বাস ও সিএনজির চালকরা তাদের কাছে থেকে মাত্রাতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় করছে। অসাধু এসব চালকদের কাছে তারা প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
এসব যাত্রীরা অপ্রত্যাশিত এই হয়রানীর হাত থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসন সহ ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের বিষয়টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।