বাসে কী ঘটেছিল : বর্ণনা দিলেন ‘ধর্ষণের’ শিকার নারী

সানশাইন ডেস্ক: চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘দলবেঁধে ধর্ষণের’ শিকার ওই নারী এখন শঙ্কামুক্ত। টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে যাত্রীবেশে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সেখানে ‘দলবেঁধে ধর্ষণের’ শিকার নারী।
ঘটনার পর বুধবার সকাল থেকে টাঙ্গাইলের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসাধীন ওই নারী বলেছেন, ডাকাতরা তিনটি স্থান থেকে বাসে উঠে; এবং তাদের একজনের সঙ্গে সিটে বসা নিয়ে তার ও বাসের কন্ডাকটরের তর্কাতর্কিও হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার বাসিন্দা ও একজন পরিবহন শ্রমিকের স্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে সিরাজগঞ্জে হোটেলে যাত্রাবিরতি থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, যাত্রীবেশে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচে উঠে ডাকাত দল গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের মারধর ও তাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র লুট করে। পরে বাসে থাকা এক নারীকে ধর্ষণ করে।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুরের রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টোপাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। অন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১০ থেকে ১২ সদস্য টানা তিন ঘণ্টা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এরই মধ্যে পুলিশ রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। যিনি বাসের মূল চালককে সরিয়ে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ‘দলবেঁধে ধর্ষণের’ শিকার ওই নারী বলেন, “আমি কুষ্টিয়ার একটি জায়গা থেকে উঠি। সিরাজগঞ্জের হোটেলে রাত সাড়ে ১১টায় এসে পৌঁছাইলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে গাড়ি চলল; তারপর পাঁচ মিনিট পরে তিনটা ছেলে উঠে। বয়স ২০ থেকে ২২ বছর। “তারপর তারা বলে যে, আমরার আরও লোক আছে সামনে। তখন আরও চারটা লোক উঠে। তার মধ্যে আরেকজন বলে, সামনে আমার আরও লোক আছে। সিরাজগঞ্জের মধ্যে আরও ছয়জন উঠে। তাদের পিছনে সিট দিয়ে দেয়।”
নিজেকে একজন পরিবহন শ্রমিকের স্ত্রী দাবি করে ওই নারী বলেন, “আমার দুটো সিট। একটা ফাঁকা। কোনো নারী পেলে নেবে, নাহলে ফাঁকাই থাকবে। তখন একজন আমার সিটে বসতে গেলে কন্ডাকটর উঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে কন্ডাকটর এসে আমার ওই সিটে বসে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বিতর্ক হয়।
“কিছুক্ষণ পরে তিনজন ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বলে যে, আমরা নামব। তারপরেই ড্রাইভারের গলায় চাক্কু বাঁধায়। তারপর ড্রাইভার ও হেলপারকে তুলে নিয়ে চলে আসে। বাসের পিছের দিকে নিয়ে এসে আটকায়ে দেয়। সাথে সাথে কন্ডাকটরকেও তুলে নেয়।” ওই নারী আরও বলেন, “তারপর যাত্রীদের মধ্যে বেটা ছেলেদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। মুখও বেঁধে ফেলে। পরে মেয়েদেরও বেঁধে ফেলতে শুরু করে। টাকা-পয়সা মোবাইল সবই কেড়ে নেয়। কারও গহনাও নিয়ে নেয়।”
“তখন আমার সাথে জেরা করছিলাম তখন এমন ধর্ষণ করে। একাই।” টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, “মেয়েটি হাসপাতালে রয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরই মধ্যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে।”
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তার ত্রিশোর্ধ্ব রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার বাসিন্দা। তিনি টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বুধবার রাতে টাঙ্গাইল শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই করা তিনটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
রাজা মিয়া টাঙ্গাইল-চন্দ্রা পথে চলাচলকারী ঝটিকা পরিবহনের বাসের চালক। বাসটির মূল চালক মনিরুল ইসলাম মনিরকে সরিয়ে রাজা মিয়া বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেন। মনিরকে তখন বাসের পেছনে বেঁধে রাখা হয়। রাজা মিয়াই তিন ঘণ্টা ধরে বাসটি চালিয়েছেন। তিনি ঘটনার অপর সঙ্গীদের নামও বলেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে থাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর