শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটে বিকল্প সেচ ব্যবস্থায় ডিপ ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে শুরু হয়েছে আমন চাষ । আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল,এ সময় ফসলি জমিতে পানি টইটম্বুর করে। এই পানিকে কাজে লাগিয়ে আমন চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে তীব্র খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে জেলার কৃষকরা আমন চাষ নিয়ে পড়েছেন ভিষন দুশ্চিন্তায়। আমন চারা রোপণের বয়স পেরিয়ে গেলেও পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না কৃষক। জমিতে পানি না থাকায় কেউ কেউ বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করে ডিপ ও শ্যালো মিশিনে ছেচ দিয়ে শুরু করেছে আমন চাষ।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাশিয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, আমি বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করে চার বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করার করার জন্য জিমি প্রস্তুত করেছে- মামুন ধান ও বিনা-১৭ ধানের বীজ চারা হয়েছে। সেই চারাতে পানিতে দিতে শতকে ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। পানি না পেলে আমন রোপণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সেচ দিয়ে চারা লাগিয়ে তা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি
পারুলিয়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, আশার ও শ্রাবণ মাসে মাঠে পানি থৈ থৈ করত কৃষক আমন চাষে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করত। এ সময়ে ধানের চারা রোপণ করা প্রায় শেষ হতো। কিন্তু এখন মাঠে গরু-ছাগল চরানো হচ্ছে। এই তীব্র খরায় আমন চারাও পুড়ে যাচ্ছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির। কোথাও কোথাও ধুলা উড়ছে। দেরিতে আমন রোপণ করলে কাঙ্খিত ফলন হবে না। আমন চাষ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি।
জেলার সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়ন কড়ই মাঠে কথা হয় কৃষক তোফাজ্জল হোসেনদের সাথে, তিনি বলেন তীব্র দাবদাহে আর অনাবৃষ্টির কারণে মাটি ফেটে চৌচির ,বৃষ্টির আশায় জমির আইলের পাশে মাটি সরিয়ে নিচ্ছি আর ফরিয়াদ করছি আল্লাহ আল্লাহ বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন, জমির আইল ঠিক করে নিচ্ছি বৃষ্টির আশায়, কিন্তু আষাঢ় মাস চলে গেল তবুও মাঠে পানি নেই। এখন শ্যালো মেশিন অথবা ডিপের (গভীর নলকূপ) পানি মাঠে দিলে তা নিয়ে আমন রোপন করব। যাদের নিজস্ব স্যাচ ব্যবস্থা আছে তারা ইতিমধ্যেই আমন রোপন শুরু করেছে তারা এছাড়া আমল উপায় নেই রোপণের আর কোনো উপায় নেই।
চারার বয়স বেশি হওয়ায় তা উঠিয়ে অল্প জায়গায় আবারও রোপণ (দৈত্য পদ্ধতি)’গছি’করেছেন সদরের রাংতা-গুয়াবাড়ির কৃষক কামাল উদ্দিন। জমিতে পানি পেলেই সেই চারা খেতে রোপণ করবেন তিনি।এই কৃষক বলেন, ধানের চারা যেন মরে না যায়, এ জন্য ‘গছি’ (দ্বৈত রোপণপদ্ধতি) করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে জমি প্রস্তুত করে দ্বৈত রোপণ করা হবে। এই গছিতে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি ৪০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আমন চাষ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৬১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ধান আবাদ করা হবে। এ জন্য ৩৭৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২৫ হেক্টর জমিসহ মোট ৩ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত হাইব্রিড ৮ হেক্টর ও উফশী ১৫৫ হেক্টরসহ মোট ১৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র এই দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির ফলে আবাদি জমিগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে আমন আবাদ তেমন শুরু হয়নি। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে সম্পূরক সেচব্যবস্থায় জমিতে পানি দিতে হবে।
সানশাইন / শামি