রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : গত ২৯ মে ২০১৮ কক্সবাজার থেকে একলাখ আট হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজশাহীর মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় আজিজুল আলমের ছেলে ব্ল্যাক ক্যাফের স্বত্তাধিকারী আসলাম সরকার ও গাড়ী চালক চারঘাটের মিয়াপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাসুদ রানা ওরফে রানা ড্রাইভার আটক হওয়ার পর পরই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এদের নেপথ্যের নায়ককে ?
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল এদের নেপথ্যের নায়কের নাম। তিনি হলেন, রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের গডফাদার এবং আর্ন্তজাতিক চোরাকারবারী হিসেবে পরিচিত চারঘাট ও বাঘা থানা পুলিশের শীর্ষ গডফাদার কালাম মোল্লার নাম। সে সময় আসলাম ও ড্রাইভার রানা আটকের পর থেকে ব্ল্যাক ক্যাফের আরেক এমডি কালাম মোল্লা ছিলেন আত্মগোপনে। তবে থেমে নেয় কালাম মোল্লার অপরাধ জগতের কর্মকান্ড।
ঐ ঘটনার কিছুদিন পর আকষ্মিক ভাবে কালাম মোল্লা নেখোঁজ হয়। এ কিছুদিন পর গুজব উঠে ভারতের জলঙ্গী থানার একটি নদীতে তার লাশ পাওয়া গেছে। এ লাশ তার আত্নীয় স্বজনরা বাড়ীতে নিয়ে আসে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায়। তখন কেউই এ লাশ চিনতে পারেনি। তারপরেও ঐ লাশটি কালাম মোল্লার চিহৃত করে রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পোষ্টমটামে পাঠায় পুলিশ। কথা ছিলে তার ছেলের শরীল থেকে রক্ত নিয়ে ডিএনএ ট্রেস্ট করানো হবে। কিন্ত সেটি রহস্য জনক কারনে অধ্যাধি সম্পন্য হয়নি। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে সমঝতার তীর ছুড়েছেন। আবার কেউ-কেউ বলেছেন, স্বার্থের কাছে সমঝোতা, অসহায় পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট ও বাঘার সীমান্তবর্তী মীরগঞ্জ হেলালপুর গ্রামের আকছেদ আলী মোল্লার ৭ ছেলে। এরা হলেন, রুস্তম মোল্লা, নজরুল মোল্লা, রুহুল মোল্লা, ইদ্রিশ মোল্লা, মোস্তফা মোল্লা, কালাম মোল্লা ও সামাদ মোল্লা। এদের মধ্যে কালাম মোল্লা ৬ষ্ঠ এবং সামাদ মোল্লা ৭ম। অভিযোগ রয়েছে, আকছেদ মোল্লার ৭ ছেলের মধ্যে ৫ জনই মাদকের ব্যবসা করেন। তবে এদের মধ্যে রুস্তম মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা, নজরুল মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লা, রুহুল মোল্লার ছেলে বুলবুল মোল্লা এরাও বাপ চাচাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন মাদক রাজ্যের গড় ফাদার। এদের সকলের নামেই চারঘাট, বাঘা, নাটোরসহ ঢাকায় রয়েছে একাধিক মাদক ও হত্যা মামলা। এর মধ্যে কালাম মোল্লা নিজেকে মৃত দাবি করলেও একাধিক সূত্র বলছেন, তিনি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আত্নগোপনে রয়েছেন। আর তার সাথে রয়েছেন তারই সহদ্বর ভাই ও হত্যা মামলার আসামী সামাদ মোল্লা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালাম মোল্লার একজন বিশ্বস্থ ব্যক্তি বলেন, ২০১৫ সালের শেষের দিকে কালাম মোল্লার মাদকের চালান চট্রগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক আটক হতে শুরু হলে কালাম মোল্লা প্রশাসনের নজরে পড়ে যায়। এসময় কালাম মোল্লা নিজেকে বাচাঁতে নিজ এলাকায় গড়ে তোলা বহুতল বিশিষ্ট ভবনের নিচ তলায় একটি পুরাতন মোটর সাইকেল শোরুম দিয়ে নিজেকে বৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে।
তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় অবশেষে রাজশাহী নগরীর আসলাম সরকারের সঙ্গে ২০১৬ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাজশাহী নগরীতে ব্ল্যাক ক্যাফ চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট গড়ে তোলেন মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার কালাম মোল্লা। মুলত প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে যাতে ব্ল্যাক ক্যাফ বসেই থেকে মাদকের জগত নিয়ন্ত্রন করা যায়। এরপর থেকে সেখানেই বসেই মুলত মাদক নিয়ন্ত্রন করতেন আন্ডার ওয়াল্ডের মাদক গডফাদার কালাম মোল্লা।
তিনি আরো বলেন, আসলাম সরকারের মাধ্যমে সে সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সের সুন্দরী তরুনীদের টাকার লোভ দেখিয়ে তার নিজের হাইচ মাইক্রোতে করে কক্সবাজার নিয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা এনে ব্ল্যাক ক্যাফেতে বসেই ছড়িয়ে দিতো উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। আর এতে সহযোগীতা করতেন কালাম মোল্লার ভাইরা রবিউল ইসলাম রবিসহ তার ভাই সামাদ মোল্লাকে ও তার ভাতিজরা।
এভাবেই আসলামের পাশা-পাশি কালাম মোল্লা এখন শতকোটি টাকার মালিক। তার নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাশ বহুল দুটি বাড়ী ছাড়াও মহদীপুর এলাকায় নিজের অর্থে তৈরি করেছেন আধুনিক একটি মসজিদ। এছাড়াও কালাম মোল্লার রয়েছে মীরগঞ্জে আরো একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যারা কালাম মোল্লার কথার বাইরে একটি ধাপ ফেলেন না। তারও এখন কালাম মোল্লার পাশা-পাশি আত্মগোপনে।
তবে কালাম মোল্লাসহ তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থাকলেও তার ভাতিজারা-সহ মহদীপুর গ্রামের মাদক সম্রাট রিয়াল বাহিনীর প্রধান রিয়াল এখনো চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা বানিজ্য। অভিযোগ উঠেছে রিয়াল বাহিনীর প্রধান রিয়ালের সঙ্গে বাঘা থানা পুলিশের কতিপয় সদস্যের রয়েছে গভীর সখ্যতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অতিতে কি হয়েছে সেটি আমার জানা নেই । কালাম মোল্লা মারা গেছে এমটি শুনেছি। আর যদি বেঁচেও থাকে, পালিয়ে থেকে লাভ হবেনা। তাকে একদিন-না একদিন আইনের আওতায় আসতে হবে ।