বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বেড়েছে গবাদি পুশু-পাখির খাবারের মূল্য। ফলে মানবদেহের জন্য আমিষের উৎসগুলো দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গরু খামারীদের দাবি গত ৫ মাসে পশু খাদ্যের মূল্য প্রায় শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণেই এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বড়তে পারে গরু-ছাগলের দাম।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় গুরু দেশে প্রবেশ করছে না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে ব্যবসায়ীরা। দেশের বাজারে পর্যাপ্ত গরু থাকার পরেও দফায় দফায় বেড়েছে গুরুর মাংসের দাম। এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে রাজশাহীর বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। বিশেষ দিনগুলোতে এই দাম ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
রাজশাহীতে যে কটি গরুর খামার রয়েছে তার মধ্যে সওদাগর এগ্রো অন্যতম। ফার্মটির স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে চরুকলায় অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে করেন ব্যবসা। রাজশাহীতে তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। রাজশাহী নগরীরভ উপকণ্ঠ কাঠাখালি এলাকায় ২৭ টি গরু নিয়ে তার খামার। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে সবগুলো গুরুই বিক্রি হয়ে গেছে।
খামারী আরাফাত রুবেল জানান, গুরুকে শুধু ঘাস বা খর খাওয়ালে হয় না, পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গুরুকে ভুসি, ডাল ও খইল খাওয়াতে হয়। গরুকে খাওয়ানোর জন্য গেল বছর যে গমের ভুসি তিনি ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিতে কিনেছিলেন। এবছর ওই একই ভুসি তাকে কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। একই ভাবে ৩২ টাকার খইল কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, ২২ টাকার ডালভুসি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ২২ টাকার সয়াবিন কিনতে হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকায়, ৫৫ কেজির ৬০০ টাকার এক বস্তা লবন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। এই হিসেবে ৬ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি গোখাদ্যের মূল্য বেড়েছে দ্বিগুণ। এই খামারী আরও জানান, সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পশু খাদ্যের মূল্য। এমন অবস্থায় বিপাকে রয়েছে খামারীরা। ক্ষতি পুশিয়ে নিতে খামারীদের পালিত গুরুগুলোর দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
এদিকে গরুর মাংসের পাশাপাশি রাজশাহীতে মুরগীর দামও বেড়েছে। ১১০ টাকা কেজির ব্রয়লার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, ১৭০ টাকার সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগী তো বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
রাজশাহী জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, গেল বছর কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা এবার রাজশাহী জেলায় ৩ লাখ ৮২ হাজার পশু পালন করেছিল। কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজারটি। রাজশাহী জেলায় স্থানীয়ভাবেই চাহিদার চেয়ে বেশি পশু পালন করা হয়। রাজশাহীতে মহিষ কোরবানি দেওয়ার প্রচলন কম। তাই খামারে মহিষ পালনও কম হয়। ছাগল প্রস্তুত ছিল প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার। ভেড়া পালা হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কোরবানি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩ টি।
ফিড ব্যবসায়ী আবু তালেব প্রাং জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। মান ভেদে প্রতি কেজি ভুসি ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে প্রতি কেজি চিকন চাল মান ভেদে ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকা এবং মোটা চাল ৩৬ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানী সাইদুর জানান, বর্তমানে ভাল মানের প্যাকেট আটা কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই উপজেলার তাহেরপুর বাজারের একই চিত্র লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতি এই বাজারের কয়েকটি পশুখাদ্যের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারে কম। এখানেও ভুসি ও ফিডের দাম বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় দুধের দাম কম। এ কারণে এখানকার খামারীরা প্রয়োজনের তুলনায় কম করে গোখাদ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কোয়ালীপাড়ার গরুর খামারী ময়েজ উদ্দিন জানান, গোখাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে করে গরু পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার খামারে আটটি গাভী রয়েছে। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার খাদ্য খাওয়াতে হয়। সঙ্গে অন্যান্য খরচও রয়েছে।
উপজেলার প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বত্রই গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘাষ চাষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে দুটি করে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হবে। এখানে ঘাস উৎপাদন ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, শুধু গোখাদ্যের মূল্য নয় সবধরনের নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই খামারী ও কৃষকদের গোখাদ্যের সংকট মোকাবেলার জন্য বিকল্প পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী জেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিক মো. আখতার হোসেন জানান, চলতি বছর রাজশাহী জেলার খামারগুলোতে কতগুলো গবাদি পশু পালন করা হয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭০ শাতংশ তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি পুশুর সরবরাহ থাকবে বলেও জানান প্রাণীসম্পদের এই কর্মকর্তা।