দুর্গাপুরে ‘ওঝা’ দিয়ে সাপে কাটা নারীর চিকিৎসা, পরে মৃত্যু

রবিউল ইসলাম রবি, দুর্গাপুর: নিজ বাড়িতে গৃহস্থালি কাজে মগ্ন ছিলেন অকেনা বেগম (৪৫)। এ সময় একটি বিষধর সাপ তাঁকে কামড় দেয়। প্রথমে খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হতে থাকলে পরিবারের স্বজনরা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় কবিরাজ বা ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা নানা রকমের ঝাড়ফুঁক ও কৌশলি কারিশমা দেখালেও অকেনা বেগম আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বিষক্রিয়ায় ছটফট করতে থাকেন। ওঝা তখনও সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে অকেনা বেগমের স্বজনদের আশ্বস্ত করেন। ঝাড়ফুঁক চলাকালীন অকেনা বেগমের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। স্বজনরা বুঝতে পারেন এখন তাকে হাসপাতালে নিতেই হবে। তাছাড়া অকেনা বেগমকে বাঁচানো যাবেনা। তবে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করে ফেলেন অকেনা বেগমের পরিবারের স্বজনরা। ওঝার বাড়ি থেকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া অকেনা বেগমকে। সেখানকার চিকিৎসকরা অকেনা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

রামেক হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অকেনা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। অকেনা বেগম রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আব্দুস ছামাদের স্ত্রী। বুধবার দুপুরে সাপের কামড়ে মারা যান অকেনা বেগম।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হলেও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে এখনও কিছু কুসংস্কার রয়ে গেছে। যে কোনো চিকিৎসায় এখনও গ্রামের সাধারণ মানুষ গুলো প্রাথমিকভাবে কবিরাজ বা ওঝা খোঁজেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার এই সময়েও কেন গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে এমন কুসংস্কার রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবারের স্বজনদের অবহেলা, অসচেতনতা ও গ্রামীণ কুসংস্কার মুল কারন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এক সময় হয়তো চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক ছিলো না। যাতায়াত ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিলো। সময়মতো আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নেয়া যেতো না। সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার অভাব ছিলো। তারা অনেকটা কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন। এ কারনে যে কোনো চিকিৎসায় কবিরাজ বা ওঝা খুঁজতেন। কিন্তু এখন চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষ সামাজিক কুসংস্কারের গন্ডি থেকে বের হতে পারছেন না।

দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, সাপ, কুকুর সহ বিষধর কোনো প্রাণী কামড়ালে এক সময় মানুষ গ্রামে গিয়ে কবিরাজের কাছে বা ওঝার কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতেন। অনেকেই হয়তো সুস্থ হয়ে যেতেন। আবার কেউ কেউ জীবনের শেষ খেয়া পাড়ি দিতেন।

কিন্ত সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। বিষক্রিয়া নষ্ট করতে নানা ধরনের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। তবুও মানুষ সেই কুসংস্কার থেকে বের হতে পারছেন না। এ ধরনের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের স্মরনাপন্ন হওয়া উচিৎ।

গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও গুলো কাজ করলে এ ধরনের মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে বলেও মন্তব্য করেন ডাঃ আব্দুল্লাহ।


প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২ | সময়: ৫:১৭ অপরাহ্ণ | সানশাইন