রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা অফিস: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনা দেওয়ার পর শেয়ারবাজারে টানা বড় দরপতন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে পতনের তালিকায়। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার বা বিনিয়োগ বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে গণনা করা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনাতেও বিনিয়োগ বাজার মূল্যে গণনার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ডের মতো ডেভ সিকিউরিটিজ, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ডকে বিনিয়োগ গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে মূল্যসূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে দরপতনের তালিকা। ফলে সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৭৭টি বা ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭০টির বা ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৯২৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। আগের দিন এই সূচকটি কমে ৫২ পয়েন্ট। অর্থাৎ দুই কার্যদিবসের বড় পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১১৬ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি পতন হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অবশ্য এই বড় দরপতনের মধ্যেই শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ১৪ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, হাক্কানি পাল্প, সমতা লেদার, অ্যাপেক্স স্পিনিং এবং জিকিউ বলপেন এই ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এছাড়া আজিজ পাইপ, এটলাস বাংলাদেশ, একমি পেস্টিসাইড, এমবি ফার্মা, ইমাম বাটন, স্টাইল ক্রাফট, তাল্লু স্পিনিং এবং বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ার দাম বেড়ে প্রায় সর্বোচ্চ সীমা কাছাকাছি চলে যায়। বড় দরপতনের দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৪০ কোটি ৯৩ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৪ কোটি ৯৯ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবথেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯০ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৫৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৯ কোটি ৪৯ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জিনেক্স ইনফোসিস, সাইফ পাওয়ারটেক, রহিমা ফুড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো এবং ইয়াকিন পলিমার। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৩টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের কোন কোন উপাদান শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে, সে বিষয় সুস্পষ্ট করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩-এর ১৬ ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তবে বিনিয়োগের কোন কোন উপাদান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তা স্পষ্টীকরণের প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধারণ করা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং শেয়ারবাজারের অন্যান্য নিদর্শনপত্রের বাজার মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহকে দেওয়া ইকুয়িটি, দীর্ঘমেয়াদি ইকুয়িটি বিনিয়োগ/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি (বিডি) ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর শেয়ার ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না। এতে আরও বলা হয়, শেয়ারবাজারে কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত অপর কোনো কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর অথবা কোনো স্টক ডিলারকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি ও তাদের সঙ্গে রক্ষিত তহবিলের স্থিতি (প্লেসমেন্ট বা অন্য যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) বিনিয়োগসীমার বাইরে থাকবে।