শনিবার, ১লা এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: বাপ-দাদার আমল থেকে খাস জমিতে কোন রকম ছাপড়া ঘর তুলে জীবন যাবন করতেন। কিছুদিন আগে সেই জমিতে সরকারী ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে মর্মে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কাগজ চাওয়া হয়। শান্তির পরশ পেয়ে মুখে ফুটে উঠে হাসি। অফুরন্ত আনন্দ অনুভূত হয় মনে।
এরকম-ই একজন আবু বক্কর (৬০)। দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন উপজেলার উপলশহর মধ্যপাড়া গ্রামে খাস জমিতে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তাদের স্থায়ী ঠিকানা লেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
আবু বক্করে মতো খাস জমিতে বসবাসকারী ৪৯টি পরিবারের নামে এই ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে তারা এসব ঘরে বসবাস শুরু করার অপেক্ষায় আছেন।
আবু বক্কর বলেন, সরবকারি লোকজন এসে কাগজপত্র নিয়ে ঘর দেওয়া হবে বলে যানায়। সেই লক্ষ্যে নির্মাণ সামগ্রী রাখার হয় বাড়ির সামনে। একমাস পুর্বে বসবাস করাঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়। কিন্তু একমাসের মধ্যে সবেমাত্র কাজ শুরু হয়েছে। শীতের মধ্যে কষ্ট করে একমাস পার করছি। ছোট ছেলেকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়েছি। ঠিকাদার মাঝে মাঝে আসে। তাড়াতাড়ি হবে বলে চলে যায়। আমরা পাকা ঘর পাব সেই আশায় সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার বড়াইগ্রাম উপজেলায় ক শ্রেণির ভূমিহীনের জন্য ৪৯টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলো কমিটির মাধ্যমে যথাযথ তত্বাবধান করে কাজ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নির্মাণাধীন ঘর ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে, বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। উপলেশহর গ্রামে আবু বক্করের ও তার দুই ছেলের নামে তিনটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটির ঘরের ধারী পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে। আরেকটি লে-আউট কাটা হয়েছে। একটি বাতিল করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে নিম্ম মানের সামগ্রীর ব্যবহার করা হচ্ছে।
এক নম্বর স্থলে ২-৩ নম্বর গ্রেডের ইট ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে, ১ঃ ৪ অনুপাতের স্থলে ১ঃ ৫ সিমেন্ট-বালির ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়াও মেঝের মাটি ভালভাবে না বসিয়ে প্লাস্টার করা হচ্ছে। নিম্ন মানের প্লেনশিট দিয়ে দরজা ও জানালা তেরী করা হয়েছে। ১৬ মিলির স্থলে ১২ মিলি রোড ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন যুবক নাসির উদ্দিন বলেন, এখানে একটি ঘর প্রায় সড়কের উপর করা হয়েছে। আবার ঘরের স্থানে মাটি ঘরাটের জন্য উপকারভোগীদের টিনের ঘর বিক্রি এবং ঋণ করে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। গরীদের উপকার করতে এসে ঋণের বোঝা মাথায় চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয় নাই।
ঘর নির্মাণের কাজে থাকা মিস্ত্রি মোজাম্মেল হক জানান, আমাকে যে ভাবে মালামাল সরবরাহ করা হচ্ছে আমি সেগুলোতেই কাজ করছি। জিনিসে মান নিয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, আমিও সরেজমি ঘর নির্মাণের সামগ্রী পরিদর্শন করে দেখেছি সিডিউলের চেয়ে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, আমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমি পরিদর্শন শেষে উপজেরা র্নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর রিপোর্ট পেশ করেছি। তবে কি রিপোর্ট পেশ করেছি তা জানতে আপনারা ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়াম খাতুন বলেন, এর আগে ইট খারাপ হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মতে রড ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। তার পরেও আমি খোঁজ নিয়ে মনিটোরিং করে যেভাবে ভাল হয় সেই ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।