রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা অফিস: টিসিবির ন্যায্যমূল্যের চার ধরনের ভোগ্যপণ্যের জন্য ঢাকায় ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ছে। লাইনে এখন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তদেরও দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কম দামে পণ্য পেতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। তবে টিসিবি বলছে, তাদের পণ্যের মান ভালো এবং দাম তুলনামুক কম হওয়ায় মানুষ তাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। টিসিবির ট্রাকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা। আর সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, এ পণ্যগুলোর বর্তমান মূল্য যথাক্রমে ১৬৮ টাকা, ১০০ টাকা, ৮০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৩৮ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেই নিম্নবিত্তের সঙ্গে মধ্যবিত্তও লাইনে শামিল হচ্ছেন। তাদের অনেকেই আবার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখলে মুখ লুকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় আয়ের সঙ্গে ব্যয় মিলাতে না পেরে তারা টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। ক্যাব-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন বলেন, “আসল কথা হলো মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে আয় বাড়ছে না। ফলে টিসিবির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। মধ্যবিত্তও সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় তারা হতাশ হচ্ছেন।”
এদিকে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতিদিনই সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি হচ্ছে। আবার শেষ পর্যন্ত পণ্য না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পণ্য না পাওয়ার জন্য প্রতারক চক্রকে দায়ী করছেন ভোক্তারা। জানা গেছে, বিভিন্ন প্রতারকচক্র সংঘবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পণ্য কিনে খোলা বাজারে লাভে বিক্রি করছে। তাদের কাছে অনেক সময়ই সাধারণ ক্রেতারা নাজেহাল হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, “পণ্যের মান ভালো এবং দাম অনেক কম হওয়ায় একটি চক্র একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিয়ে লাভের জন্য খোলা বাজারে বিক্রি করে। তারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অন্যদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত পণ্য পান না। আমাদেরও করার কিছু থাকে না। কারণ প্রতারকদের ঠোকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় বাড়তি জনবল আমাদের নেই।” ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরসহ ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা সয়াবিন তেল দুই লিটার, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন। টিসিবির প্রত্যাশা, ওই পণ্য শেষ হওয়ার পরই ক্রেতারা আবার কিনবেন। কিন্তু দেখা যায় অনেকে প্রতিদিনই কেনেন। তার ওপর প্রতারক চক্র তো আছেই। টিসিবি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জুয়েলও মনে করেন, টিসিবির পণ্যের মান এখন অনেক ভালো এবং দাম কম তাই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ এখন লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “আগে এরকম দেখিনি। আগে শুধু নিম্নবিত্তরাই টিসিবির পণ্য কিনতেন।” লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পণ্য পান না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, “লাইনে যারা দাঁড়ান শেষ পর্যন্ত তাদের সবাই পণ্য পান না। দুই-তিন ঘণ্টা দাঁড়ানোর পরও কেউ কেউ ফিরে যান। কারণ পণ্য সীমিত।” আর একটি চক্রের তৎপরতার কথা তিনি স্বীকার করলেও তাদের সাথে বিক্রেতাদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “দলবেঁধে লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পণ্য কেনার ঘটনা ধরা পড়লেও কিছু করার থাকে না। কারণ পরিস্থিতি সামলানোর মতো লোকবল আমাদের নেই। আমরা তাদের চিহ্নিত করতে বিক্রি বন্ধ করলেও আবার বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়।” উল্লেখ্য, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ট্রাক সেলের কর্মসূচি শেষ হলেও মার্চ থেকে আবারো শুরু হবে। রমজান মাসেও চলবে। এবার পণ্য এবং বিক্রির আওতা দুইটিই আরও বাড়ানো হবে। আর যারা ইতিমধ্যে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা পেয়েছেন তাদের তালিকা করে তারা যাতে টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য পান তা নিশ্চিত করা হবে। এদিকে পেঁয়াজের সংকটের সময় অনলাইনে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখন আর চালু নেই।