রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: বিগ ব্যাশের দারুণ ফর্ম অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার ম্যাচে বয়ে আনলেন বেন ম্যাকডারমট। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে দলকে এনে দিলেন লড়ার পুঁজি। পরে অবশ্য দুর্দান্ত বোলিংয়ে সব আলো কেড়ে নিলেন জশ হেইজেলউড ও অ্যাডাম জ্যাম্পা। তাদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং।
সিডনি ক্রিকেট মাঠে শুক্রবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২০ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অ্যারন ফিঞ্চের দল এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। সবশেষ বিগ ব্যাশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ম্যাকডারমট পাঁচ মাস পর জাতীয় দলে ফিরেই খেললেন ৫৩ রানের ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার প্রথম ফিফটির সুবাদে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান তোলে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
দুই ইনিংসের মাঝেই বাধা দেয় বৃষ্টি। তাতে শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯ ওভারে ১৪৩ রানের। সফরকারীরা শেষ পর্যন্ত করতে পারে ৮ উইকেটে ১২২। স্বাগতিক বোলারদের সামনে কখনোই সেভাবে জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন হেইজেলউড। তার আগের সেরা ৩০ রান দিয়ে চারটি।
১৮ রান দিয়ে জ্যাম্পার শিকার ৩ উইকেট। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ায় এই লেগ স্পিনারই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ম্যাচের শুরুটা অবশ্য খারাপ ছিল না শ্রীলঙ্কার। হালকা ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে তারা টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। পাওয়ার প্লেতে কেবল তিনটি বাউন্ডারি মারতে পারে অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক ফিঞ্চকে হারিয়ে তুলতে পারে কেবল ৩৭ রান। পঞ্চম ওভারে ভানিন্দু হাসারাঙ্গার ঝুলিয়ে দেওয়া গুগলিতে বোল্ড হয়ে যান ফিঞ্চ।
অভিষিক্ত জশ ইংলিসকে ১০ রানেই ফেরাতে পারত শ্রীলঙ্কা। চামিকা করুনারত্নের বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন তিনি, বুঝতেই পারেনি সফরকারীরা। তাই আবেদনও করেনি তারা। পরে স্নিকোতে দেখা যায় ইংলিসের ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়েছে দিনেশ চান্দিমালের গ্লাভসে। পরের ওভারে নামে বৃষ্টি। ২০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি ইংলিস। করুনারত্নেরই ইয়র্কারে রিভার্স সুইপ করে বোল্ড হন ৩ চারে ২৩ রান করে।
হাসারাঙ্গার ফুল টসে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন গ্নেন ম্যাক্সওয়েল। পরের ওভারে লঙ্কান লেগ স্পিনার ফিরিয়ে দেন স্টিভেন স্মিথকেও। তার ঝুলিয়ে দেওয়া গুগলি ছোবল দেয় স্মিথের স্টাম্পে। এই দুজনের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দারুণ ব্যাটিং করে যান ম্যাকডারমট। তার ব্যাটেই মূলত বাড়তে থাকে দলের রান। দুর্দান্ত সব শট খেলে ৩৮ বলে পৌঁছে যান ফিফটিতে। গত অগাস্টে বাংলাদেশ সফরে সবশেষ খেলেছিলেন তিনি।
দারুণ খেলতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকেও ফেরান করুনারত্নে। ম্যাকডারমটের ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৫৩ রানের ইনিংসটি শেষ হয় এলবিডব্লিউ হয়ে। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়ার রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন মার্কাস স্টয়নিস। মাহিশ থিকশানাকে ছক্কা-চারের পর দুশমন্থ চামিরাকেও তিনি মারেন একটি করে ছক্কা-চার।
ম্যাথু ওয়েডকে ফেরানোর পরের বলেই স্টয়নিসকে আউট করেন বিনুরা ফার্নান্দো। ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে স্টয়নিস ফেরেন দুটি করে ছক্কা-চারে ৩০ করে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা ফুল টস দিয়ে নষ্ট করেন বিনুরা। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা করতে পারেননি কিছুই। শেষ ১৮ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করতে পারে স্রেফ ৯ রান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার হাসাঙ্গারা। দুর্দান্ত বোলিং করেন বিনুরাও, কেবল ১২ রান দিয়ে তার শিকার দুই উইকেট। দুটি করে প্রাপ্তি চামিরা ও করুনারত্নেরও। রান তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা দানুশকা গুনাথিলাকা। প্যাট কামিন্সকে ছক্কায় ওড়ানো আভিশকা ফার্নান্দো পরের বলেই ফেরেন সাজঘরে।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন পাথুম নিসানকা ও চারিথ আসালাঙ্কা। ওই দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। দারুণ কিছু শটে দলের রান বাড়াতে থাকেন নিসানকা। তাকে সঙ্গ দেন আসালাঙ্কা। জমে যাওয়া ৪৩ রানের জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জ্যাম্পা। তিন বলের মধ্যে ফেরান দুইজনকেই।
অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনারকে স্লগ সুইপ করে আকাশে তুলে দেন স্টয়নিসের বলে ১৬ রানে জীবন পাওয়া নিসানকা। লং-অন থেকে অনেকটা সামনে দৌড়ে এসে বল মুঠোয় জমান মিচেল স্টার্ক। শেষ হয় লঙ্কান ওপেনারের এক ছক্কা ও ৫ চারে ৩৬ রানের ইনিংস। একই শট খেলে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন আসালাঙ্কা।
জ্যাম্পা পরের ওভারে পেতে পারতেন আরেকটি। দাসুন শানাকাকে স্টাম্পিং করতে ব্যর্থ হন ওয়েড। নিজের শেষ ওভারে আরেকটি শিকার ধরেন জ্যাম্পা। তাকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে ঠিক মতো করতে না পেরে কাভারে ক্যাচ দেন হাসারাঙ্গা। ওই ওভার শেষ না হতেই বৃষ্টি নামে। এই দফায় খেলা বন্ধ থাকে ১৫ মিনিটের মতো। খেলা মাঠে ফেরার প্রথম ওভারেই শানাকা ও করুনারত্নেকে ফিরিয়ে দেন হেইজেলউড। এই পেসার পরে নেন চামিরার উইকেটও।
চান্দিমাল শেষ দিকে কেবল দলের হারের ব্যবধানই কমাতে পারেন। ৩ চার ও এক ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ করে থাকেন অপরাজিত। এই নিয়ে টানা ছয় টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে জিতল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী রোববার মুখোমুখি হবে দুই দল