রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে টানা তৃতীয় দিনের মত ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৮০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
এর আগে মঙ্গলবার ১৬ হাজার ৬৬ জন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল, যা মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর বুধবার ১৫ হাজার ৫২৭ জন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময়, গত বছরের ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, মহামারীর মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ জনে। তাদের মধ্যে মোট ২৮ হাজার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর সরকারের খাতায় এসেছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন এক হাজার ৩৭ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৩ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ২৪৫ জন। গত ২০ জানুয়ারি ছিল ৭০ হাজার ১৫৭ জন। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়ে দ্বিগুনের বেশি হয়েছে।
ডেল্টার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল গত বছরের শেষে। ডিসেম্বরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ২০০ থেকে ৩০০ এর ঘরে। শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২ শতাংশের নিচে। কিন্তু বিশ্বে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর জানুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশেরও আবার দ্রুত উঠতে থাকে সংক্রমণের গ্রাফ।
জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, এখন তা ১৫ হাজারের বেশি থাকছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও থাকছে ৩০ শতাংশের উপরে। বুধবার শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত বছরের ২৪ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ২০২০ সালের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা এ মাহামারীকালের রেকর্ড। গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৯ হাজার ৭৬৯ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগের দিনও এ বিভাগে ৯ হাজার ৪৫৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা ছিল দিনের মোট শনাক্তের ৬০ শতাংশের বেশি।
গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত সপ্তাহখানেক ধরে দেশের অন্যান্য জেলাতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৮৪৯৩ জন, গাজীপুরে ২৪২ জন, কিশোরগঞ্জে ১১৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ২২১ জন এবং নরসিংদীতে ১৫২ জন এবং টাঙ্গাইলে ১৩৭ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১১২৭ জন, কক্সবাজারে ২৬৫ জন, নোয়াখালীতে ১০৯, চাঁদপুরে ১২৩ জন এবং কুমিল্লায় ২৪১ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ৩১০ জন, পাবনায় ১৮৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩৫ জন, বগুড়ায় ২১০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ২৮০ জন, যাশোরে ২০৪ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩৬ জন; সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৫২০ জন, মৌলভীবাজারে ১৪২ জন; বরিশাল জেলায় ১৩৪ জন, রংপুর জেলায় ১০১ জন এবং ময়মনসিংহে ২৬১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পাঁচ জন পুরুষ, ১০ জন নারী। তাদের মধ্যে আট জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের তিনজন, রাজশাহী বিভাগের দুইজন জন, বরিশাল বিভাগে একজন এবং রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ছয় জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, দুইজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ২৫ জানুয়ারি তা ১৭ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৬ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ।