রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আদমদীঘি প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যা মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষ্যস্মারক, মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত স্থাপত্যের নিদর্শন। অথচ স্মৃতিস্তম্ভের দেয়ালেই করছে প্রস্রাব, অনেকে জুতা পায়েও উঠছে স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে। কেউবা তোলে সেলফি, কেউবা ব্যস্ত মোবাইলে। এমনই প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটছে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে শহীদদের স্মরণে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের চত্বরে।
জানা যায়, উপজেলার সান্তাহারে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে এই শহরে। ১৯৭১ সালে প্রায় ২৫ হাজার বিহারির বসবাস ছিল এই শহরে। মুত্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বিহারিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালী নিধন কার্যক্রম শুরু করে। সেই সময় বাঙ্গালীদের উপর শুরু হয় নিপীড়ন নির্যাতন। ১৯৭১ সালের শেষ পযর্ন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞের ভয়ে ভিত না হয়ে প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়ায় বাঙ্গালীরা। ফলে নিহত হয় উভয় পক্ষের লোকজন। সেইসময় পাকবাহিনী বিহারি হত্যা কান্ডের প্রতিশোধ হিসাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় বাঙ্গালীদের উপর। প্রাণ যায় অনেক হিন্দু, মুসলমানসহ নানা ধর্মের মানুষের।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সেই সকল শহীদদের জন্য সান্তাহারে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয় ২০১৫ সালে। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের মূল বেদীতে জুতা পায়ে উঠে করছে ঘোরাঘুরি, অনেকে ব্যস্ত থাকে ছবি তোলা নিয়ে, কেউবা ব্যস্ত খোশগল্পে। জুতা পায়ে উঠা নিষেধ থাকলেও মানছে না দর্শনার্থীরা।
এছাড়া স্তম্ভের দেওয়ালেই প্রস্রাব করছে অনেকে। যার কারণে দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে আশেপাশে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরের যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। যার কারণে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভের। অভাব আমাদের সচেতনতারÑ এমনটাই ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে বলছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে জুতা পায়ে উঠা আমাদের কারোই কাম্য নয়। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি নিজেদের আরও সচেতন হতে হবে। এছাড়া এটি বন্ধের জন্য সকলকে এক সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ডিজাইনার সাজেদুল ইসলাম চম্পা বলেন, স্বাধীনতা আমাদের গৌরবের বিষয়, আমাদের অহংকার আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ তারই প্রতীক। এখানে জুতা পায়ে ওঠা নিয়ে এর আগেও আমি বহুবার সচেতন করার চেষ্টা করেছি। তিনি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে আরও বলেন, লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে আসে। আমি বিস্মিত ও লজ্জিত হই।