রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: একটি উইকেট, দুটি ওভার; উত্তেজনার সর্বোচ্চ চূড়ায় সিডনি টেস্ট। ডাগআউটে বেন স্টোকসকে দেখা গেল কিছুক্ষণ দুই হাত দিয়ে ঢেকে রাখছেন মুখ, আবার অনুশীলন জার্সির ভেতরে লুকিয়ে ফেলছেন মাথা। প্রতি বলেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডারদের। চরম স্নায়ু চাপের মধ্যে ন্যাথান লায়নের ওভারটি কাটিয়ে দিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। দিনের শেষ ওভারে স্টিভেন স্মিথের ছয়টি বল কোনো ভুল ছাড়াই পার করলেন নতুন ব্যাটসম্যান জেমস অ্যান্ডারসন। শেষ উইকেটে দুই বোলারের দৃঢ়তায় এবারের অ্যাশেজে প্রথম হার এড়াল ইংল্যান্ড।
সিরিজের রোমাঞ্চকর চতুর্থ টেস্টটি রোববার ড্র হওয়ায় হোয়াইটওয়াশড হওয়ার শঙ্কাও দূর হয়েছে ইংল্যান্ডের। টানা তিন ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিনে জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ৩৫৮ রান, অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেট। প্রতিপক্ষের ৯টি উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্রড-অ্যান্ডারসন মিলে রুখে দেন তাদের। ৯ উইকেটে ২৭০ রান নিয়ে শেষ করে ইংল্যান্ড।
চতুর্থ ইনিংসে ৯ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ ড্র হতে দ্বিতীয়বার দেখল অ্যাশেজ। আগেরটি ২০০৫ অ্যাশেজের ম্যানচেস্টার টেস্ট। জ্যাক ক্রলি, স্টোকসের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম দুই সেশন শেষে ভালো অবস্থানেই ছিল ইংল্যান্ড। তৃতীয় সেশনে এসে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হলো স্বাগতিকদের।
শেষ দিকে আলোকস্বল্পতায় ফ্লাডলাইটের নিচে খেলতে হয় ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের। এই কারণেই মূলত শেষ দিকে স্মিথকে আক্রমণে আনতে বাধ্য হন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এবারের অ্যাশেজ জুড়েই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। সিডনিতে এসে দৃঢ়তা দেখালেন তারা। রান পেলেন জনি বেয়ারস্টো, স্টোকস, ক্রলি। ইংলিশদের এই ড্রয়ে বৃষ্টির অবদানও অবশ্য কম নয়। প্রথম তিন দিনের পর পঞ্চম দিনেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি।
৩৮৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বিনা উইকেটে ৩০ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। জয়ের লক্ষ্য তাড়ার কাজটি সহজ ছিল না সফরকারীদের জন্য। টেস্ট ইতিহাসে এত রান আগে কখনও তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই তাদের। দিনের সপ্তম ওভারেই জীবন পান হাসিব হামিদ। কামিন্সের বলে ইংলিশ ওপেনারের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি অ্যালেক্স কেয়ারি। যদিও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হামিদ। স্কট বোল্যান্ডের বলে ধরা পড়েন কেয়ারির গ্লাভসেই।
দাভিদ মালানের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন লায়ন। ৬৯ বলে ফিফটি করা ক্রলিকে ইনিংস বড় করতে দেননি ক্যামেরন গ্রিন। ১৩ চারে ৭৭ রানে ক্রলি হয়ে যান এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ইংলিশ ওপেনার। জো রুট ও বেন স্টোকসের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে ইংল্যান্ড। বৃষ্টির বাধায় এক ঘণ্টা পর খেলা আবার শুরু হলে রুটকে কট বিহাইন্ড করে দেন বোল্যান্ড। ভাঙে ১৫২ বল স্থায়ী ৬০ রানের জুটি।
এরপর বেয়ারস্টোকে নিয়ে দলের হাল ধরেন স্টোকস। তাদের ৯৯ বল স্থায়ী ৩৭ রানের জুটি ভাঙে স্টোকস ফিরলে। ১০৭ বলে ফিফটি করা ইংলিশ অলরাউন্ডার এক ছক্কা ও ১০ চারে ৬০ রান করে লায়নের বলে ধরা পড়েন স্লিপে। লড়াই চালিয়ে যান বেয়ারস্টো। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি জস বাটলার, মার্ক উড। এই দুই ব্যাটসম্যানকে এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন কামিন্স।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান বেয়ারস্টোও শেষ করে আসতে পারেননি। বোল্যান্ডের বলে শেষ হয় তার ১০৫ বলে ৪১ রানের ইনিংস। মাঝে মিচেল স্টার্কের বলে দ্বিতীয় স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়েন স্মিথ। এরপর বাকি ছিল দিনের ১০ ওভারেরও বেশি। লিচ, ব্রড ও অ্যান্ডারসনের দৃঢ়তায় শেষ দিকের চ্যালেঞ্জ উতরে যায় ইংল্যান্ড। শেষের দুই ওভারে আগে ৩৪ বলে ২৬ রান করে লিচকে ফিরিয়ে স্মিথ আশার আলো জাগান। কিন্তু তাদের সেই প্রদীপ নিভিয়ে দেন অ্যান্ডারসন-ব্রড। আগামী শুক্রবার শুরু সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট।