শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় এমন সম্পদশালী, প্রবাসীসহ মৃত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। তাদের কেউ অনিয়ম করে চাল নিচ্ছেন, আর কারো নামে ডিলারের সহযোগিতায় প্রভাবশালীরা চাল তুলে আত্নসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের থানাইখাড়া গ্রামের বাসিন্দা আরিফ আলী (৪২)। দোতলা বাড়িতে বাবা-মা ও ছোট ভাই পরিবারসহ বসবাস করেন, নীচতলায় তার পাটের গোডাউন। নিজে থাকেন আধাপাকা আরেক বাড়িতে।
মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী এ ব্যবসায়ীর জোনাইল, নগর ও সাহেব বাজারে রয়েছে ধান, পাট ও রসুনসহ ক্রয় করা নানা পণ্যের পৃথক গোডাউন। ৫ বিঘা আবাদী জমিসহ প্রায় কোটি টাকার মালিক এ ব্যবসায়ীর নামেও রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড।
জানা যায়, সরকার হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় নগর ইউনিয়নে দুই হাজার ১৪ জনের জন্য চার ও চান্দাই ইউনিয়নে এক হাজার ৫০৬ জন কার্ডধারীকে চাল দেয়ার জন্য দু’জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা করে গত পাঁচ বছর ধরে এ কর্মসূচির চাল বিক্রি হচ্ছে। হতদরিদ্রদের তালিকাভূক্তির নিয়ম থাকলেও ১২ বিঘা জমির মালিক, দ্বিতল বাসভবনের মালিক, কোটিপতিসহ স্বচ্ছল ব্যক্তির নামে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাদের কেউ চাল তুলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিক্রি করেন আর কেউ পুকুরের মাছকে খাওয়ান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চান্দাই ইউনিয়নের দিয়ার গাড়ফা গ্রামের মোঃ আনোয়ারের (কার্ড নং ৩২৩) নামে নিয়মিত চাল তোলা হলেও তার নামে কার্ড হয়েছে এমনটি জানা নেই তার।
নগর ইউনিয়নের বড়দেহা গ্রামের শুকুমুদ্দিন প্রামাণিকের স্ত্রী আমেরজান বেগম (কার্ড নং ৪০৮) প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন, কিন্তু তার নামও রয়েছে চাল পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায়। ক্ষিদ্রি আটাই গ্রামের স্ত্রী-সন্তানহীন মানসিক প্রতিবন্ধী আরশেদ আলীর নামে কার্ড রয়েছে।
একই গ্রামের কার্ডধারী শাহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন এবং রহমত আলীর ছেলে কাজল আলীর খোঁজ মেলেনি। নগর গ্রামের উমর আলী মন্ডলের ছেলে সাইদ ১২ বিঘা জমির মালিক হয়েও ১০ টাকা কেজির চাল পাচ্ছেন। বড়দেহা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলের স্ত্রীসহ তিন সন্তানের নামেই কার্ড রয়েছে।
তাদের মধ্যে স্ত্রী রহিমা বেগম পুকুরসহ তিন বিঘা এবং ছেলে মাসুদ রানা ও জিল্লুর রহমান তিন বিঘা করে এবং রেজাউল করিম মুদি দোকানসহ চার বিঘা জমির মালিক। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে পৃথক দালান বাড়ি। একই গ্রামের মতিউর রহমানের পুকুরসহ ১০ বিঘা জমি থাকলেও তিনি দিনমজুর পরিচয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তুলে পুকুরের মাছকে খাওয়াচ্ছেন।
ওই গ্রামের ৬ বিঘা জমির মালিক জোনাব আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, পাকাবাড়িসহ ৮ বিঘা জমির মালিক আবুল কালামের স্ত্রী রমেছা বেগম এবং ৪ বিঘা জমির মালিক জহুরুল ইসলামের স্ত্রী শিখা বেগমও পেয়েছেন এ কার্ড। এছাড়া কার্ডধারী জুমার উদ্দিনের পাঁচ, এনামুল হকের চার বিঘা জমি রয়েছে। থানাইখাড়ার আব্দুর রহিম ও ইয়াছিন আলী পাকাবাড়িসহ চার বিঘা করে জমির মালিক।
ক্ষিদ্রি আটাইয়ের সাবিনা বেগমের চার ও রিপনের পুকুরসহ তিন বিঘা জমি রয়েছে। আটাই গ্রামের প্রাচীর ঘেরা পাকা বাড়ির মালিক আব্দুছ ছামাদসহ ৪-৫ বিঘা জমির মালিক ইসলাম উদ্দিন, আব্দুস ছালাম, চাম্পা বেগম, শাহজাহান প্রামাণিক, কোবাদ সোনারু ও আলিম সোনারুর নামেও কার্ড দেয়া হয়েছে। বড়দেহা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আশিকের নামেও উঠছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল। এসব ব্যাপারে নগর বাজারের ডিলার আব্দুল করিম রান্টু ও বড়দেহা এলাকার ডিলার রবিউল করিম বলেন, ধনী-গরীব বাছাই করবে জনপ্রতিনিধিরা, আমার দায়িত্ব চাল দেয়া। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আফরোজা পারভীন বলেন, এমন অভিযোগ আগে পাইনি। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।