জবি প্রতিনিধি:প্রতিষ্ঠার ষোল বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন নতুন একাডেমিক ভবনের পঞ্চম মেয়াদের কাজ শেষ হয়েও যেনো শেষ হচ্ছেনা। ভবনটির পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক লোড নেয়ার অক্ষমতা, নিম্নমানের লিফট ব্যবহার ও রঙের হালকা প্রলেপ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এখনও বেশ কিছু কাজ রয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ কাজ মোটামুটি শেষ হলেও ভবনের বাহিরের দিকে পুরোপুরি রঙের প্রলেপ না দেয়ায় বাহ্যিক সৌন্দর্যেও পূর্ণতা পাচ্ছে না ভবনটি।
অবকাঠামোসহ শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমের সংকট সমাধান করতে কাজ শুরু হয় নতুন একাডেমি ভবনের। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ভবনটি এখনও হস্তান্তর করার ও কোনো অগ্রগতি নেই। এর দরুন শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানাধীন এ ভবনের অসংগতি থেকেই যাচ্ছে।
২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কাজ ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালে চতুর্থ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ৩০ শতাংশ কাজ বাকি থাকতেই ২০২০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরু করা হয়, পঞ্চম মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মিতব্য ১৩ তলা এই ভবনের ১৩ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হলেও এখনও পুরোপুরিভাবে ব্যবহার শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন এই ভবনের ৭ তলা থেকে শুরু করে ১৩ তলা পর্যন্ত টাইলস লাগানো ও ভেতরে রং করা হলেও বাহিরে পুরোটাই রঙের আরো একটি প্রলেপ দেয়া বাকি আছে। এছাড়াও ভবন নির্মাণের প্রয়োজনে বিভিন্ন অংশ খোড়াখুড়ি করা হলেও সেগুলো এখনও পূর্বের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। ভবনটির ছাদেও অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে।
বর্তমানে নবম তলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও অফিস রয়েছে। করোনা পরবর্তীতে দশম তলায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের ক্লাসরুম দেয়া হয়েছে। এই তলাতেই গবেষণা পরিচালকের অফিসসহ প্রায় অর্ধেক ফ্লোর ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উপরে ১১, ১২ ও ১৩ তলা সম্পূর্ণ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়াও ১০ তলা থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের তার এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বিভিন্ন কক্ষে ও বারান্দায়। এখনও পর্যন্ত এর কাজ করা হয়নি। নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থাও করা হয়নি। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকাও রয়েছে।
নতুন ভবনে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন তিনটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। গত জুনে লিফট বসানো শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তা এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
বর্তমানে পঞ্চম মেয়াদের সময় শেষ হলেও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে এখনও ভবনটি হস্তান্তরের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি।
ভবনটির কাজের বিষয়ে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লি. (জেপি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম দিকে ভবনের কিছু ত্রুটি ও জটিলতা থাকার কারণে কাজ দীর্ঘায়িত হয়েছে। আমরা এই প্রকল্প পাই ২০১৪ সালে। কিন্ত এ কাজ শেষ না হতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে আমরা পঞ্চম মেয়াদে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের কাজ শেষ। সাব-স্টেশনের সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল লাইন, এখনও সাবস্টেশনের টেন্ডারই করেনি। সাবস্টেশন যে করবে সেই রুমের টেন্ডারই করা হয়নি।
প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের ফায়ার হাউজের কাজটা বাকি আছে। এখন আমাদের কাজটা শেষ হয়নাই মূলত ফান্ডের জন্য। আমরা সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাবো, এখনও টাকাই দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে টাকা দিবে, সেই টাকা শিক্ষা অধিদপ্তর আমাদের কোম্পানিকে পরিশোধ করবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, নিউ একাডেমিক ভবন হস্তান্তরের জন্য এখন ও কোনো চিঠিই দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এখনও টাকা পরিশোধ সম্পন্ন করতে পারে নি। বাজেট আছে, তবে কাজের অগ্রগতির দেখে তা সম্পূর্ণটা দেয়া হচ্ছেনা। সিভিলের কাজ যদিও শত ভাগ করা সম্ভব নয়। এদিকে এ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ৩১, ২০২১ শেষ হবে।
টাকা ডিউ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কাজের গতি দেখে টাকা পরিশোধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা না দেয়ার ও তো কারণ আছে। তারা কাজ শেষ করতে পারে নাই তাই টাকা দেয়া হয় নাই।
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বর্তমানে বিদুৎ সাপ্লাইয়ের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার তারগুলো লোড নিতে পারছেনা। শীতকালে কোনো সমস্যা না হলেও গ্রীষ্মকালে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক এসি চলে, তাই সেই লোডটা আর নিতে পারেনা। অনেক সময় আমাদের নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। আমাদের ১৩ তলা নতুন যে ভবনটা হয়েছে সেটাতেও প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। খুব দ্রুত একটা সাব-স্টেশন স্থাপন করা জরুরী। তা না হলে যেকোনো সময় দূর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও স্পেস বরাদ্দ কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ জানান, জানুয়ারি ২০২১ এর ৬ তারিখ স্পেস কমিটির মিটিং। উপাচার্য থাকবেন, কমিটির সকল মেম্বাররা থাকবে। স্পেস একটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি একা দায়বদ্ধতা নিতে চাই না। এটা আমার একার বিষয় না, সবার বিষয়। সবাই শিফট হবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার কাজ আমি গুছিয়ে নিয়েছি।
বিদুৎ লাইনের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু এখন শীতকাল এটা নিয়ে তাই আমরা আপাতত ভাবছি না। আমাদের স্পেস যেহেতু সমস্যা ওইটা আগে সমাধান হোক, বিদুৎ এর কাজ আমরা পরে করে নিবো। কোনো সমস্যা নেই। ক্লাসরুম রেডি আছে যেগুলো ওগুলো আমরা দিয়ে দিবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।