মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং একটিতে বিএনপি নেতা জয়ী হয়েছেন।
এর মধ্যে দুর্গাপুরে চারটিতে আওয়ামী লীগ ও দুইটিতে বিদ্রোহী, চারঘাটে চারটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপি এবং বাঘার দুইটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজীয় হয়েছেন। রোববার কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটানিং অফিসার।
দুর্গাপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহীর দুর্গাপুরে চতুর্থ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চার ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলা পরিষদ হলরুমে বেসরকারী ফলাফল ঘোষনা করেন উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা এবং সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ নং কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নে আবুল কালাম আজাদ, ৩ নং পানানগর ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত আজাহার আলী খাঁ, ৫নং ঝালুকা ইউনিয়নে আকতার আলী ও ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নে মিজানুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১নং নওপাড়া ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল আলম ও ৪নং দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
১নং নওপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল আলম ঘোড়া প্রতীকে ৯ হাজার ৮৬২ ভোট পেয়ে বেসরকারিকরণ ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৮১ ভোট।
২নং কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আকবর আলী আনারস প্রতীকে ৫ হাজার ৫৪৫ ভোট।
৩নং পানানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজাহার আলী নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৭৩২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আদম আলী ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৫২ ভোট।
৪নং দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে ৭ হাজার ৯২২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আহসান হাবিব নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৯১৫ ভোট।
৫নং ঝালুকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আকতার আলী নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোজাহার আলী মন্ডল পেয়েছেন ৫ হাজার ২২৮ ভোট।
৭নং জয়নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিজানুর রহমান নৌকা প্রতীকে ১০ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শমসের আলী ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৬৮ ভোট।
রোববার রাতে নির্বাচন ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীদের আনন্দ মিছিল না করতে অনুরোধ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা।
বাঘা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহীর বাঘায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এর মধ্যে দু’টি ইউনিয়ন আড়ানী ও চকরাজাপুরে নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোননীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক ও বাবলু দেওয়ান। অপর একটি ইউনিয়ন বাউসায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুর মোহাম্মদ তুফান।
এই নির্বাচনে আড়ানী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যার রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৪২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন (সতন্ত্র ) প্রার্থী আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৯২৪।
অপর দিকে চকরাজাপুরে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী বাবলু দেওয়ান নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আ’লীগের বিদ্রোহী আজিযুল আজম আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১০১ ভোট।
অপর একটি ইউনিয়ন বাউসা সেখানে তৃমুখী লড়ায়ের এক পর্যায় ৮ হাজার ১৬৫ ভোট পেয়ে বিজিয়ী হয়েছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুর মোহাম্মদ তুফান। তার নিকটতম প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২৮।
রবিবার রাত ১০ টায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার মজিবুল আলম বেসরকারী ভাবে এ ফলাফল ঘোষনা করেন।
অপরদিকে, চারঘাট প্রতিনিধি জানান, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজশাহীর চারঘাটে ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়াও দুটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন দুইজন। রোববার রাতে বেসরকারী ফলাফলে তাদের বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।
নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এরা হলেন, চারঘাট সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের (নৌকা) ফজলুল হক, ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের (নৌকা) আব্দুল মজিদ প্রামানিক, সরদহ ইউনিয়নে (নৌকা) হাসানুজ্জামান মধু, শলুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের (নৌকা) আবুল কালাম আজদ।
এছাড়াও উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিদ্রোহী হিসেবে চেয়ারম্যান হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মাখন (ঘোড়া) এবং নিমপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থক মিজানুর রহমান (চশমা) স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ছোট খাটো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ৬টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন অপরাধে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বিপ্লবসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে আর্থিক দন্ডে দন্ডিত করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক।
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার সকাল থেকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নেই শান্তিপূর্ণ ভাবে এবং উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এরপর দুপুরের দিকে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী ভোট কেন্দ্রে কয়েকজন যুবক বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে সেখান থেকে ৯ জন আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়াও উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে কয়েকজনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে নগদ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। তবে সার্বিক দিক থেকে চারঘাটের ৬টি ইউনিয়নেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সমাপ্তি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে ৪র্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন, ২২৩ জন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ১১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭০ হাজার ৫৩৪ জন ও নারী ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। মোট ৬০টি কেন্দ্রে ৪১৩টি বুথের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।