রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: ‘সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস’ উপলক্ষে রাজশাহীতে ‘বাংলাদেশে সাঁওতালি ভাষার ভবিষ্যৎ ও করণীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদিবাসী ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশন এবং সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির যৌথ উদ্যোগে বুধবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় বিভিন্ন জেলা উপজেলার ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ সারনা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক গনেশ মার্ডি এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় বক্তারা সাঁওতালি ভাষার লিপি বিতর্কের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে অলচিকি লিপিতে ভারতের মতো বাংলাদেশেও সাঁওতালদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানান।
তারা বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ভাষা হচ্ছে সাঁওতালি ভাষা। এটি বর্তমান বাংলাদেশের কথ্য ভাষার মধ্যে সম্ভবত তৃতীয় বৃহৎ ভাষা। ১৯২৫ সালে সাঁওতাল পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু এই ভাষার জন্য অলচিকি লিপি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এই লিপিটি দিয়েই পৃথিবীর সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ সাহিত্য চর্চা করে আসছে। এই অলচিকি লিপি ব্যবহার করেই উইকিপিডিয়ার ভার্সনও চালু হয়েছে।
এ ছাড়া ২০০৮ সালের এপ্রিলে অলচিকি ইউনিকোড কনসর্টিয়ামে অন্তর্ভূক্ত হয়ে বিশ্বের অন্যতম লিপি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে অলচিকি বর্ণমালা ব্যবহার করে সাঁওতালি ভাষায় ভারতে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা দান কার্যক্রম চালু হয়েছে। তাই বাংলাদেশেও সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে সাঁওতালি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগেও সাঁওতালি ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নয়ন কমিটির সদস্য সুবাস মুরমু, আদিবাসী ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মানিক সরেন, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, রিপন মুর্মু, কর্নেলিউস মার্ডী, রাজেন হেমব্রম, আদিবাসী নারী নেত্রী জলিতা কিস্কু, সোনাবাবু হেমব্রম, নৃত্যশিল্পী সাবিত্রী হেমব্রম, শিবলাল টুডু প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন আদিবাসী সংগঠক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের সংবিধানের শততম সংশোধনীতে সাঁওতালি ভাষা অষ্টম তফশীলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সাঁওতালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা পায়। তাই এই দিনটিকে ‘সাঁওতালি ভাষা বিজয় দিবস’ হিসেবে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, নেপালের সাঁওতালি ভাষাভাষি মানুষেরা পালন করেন।