শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: বড়াইগ্রামের গড়মাটি গ্রামের ইয়াছিন আলী প্রামাণিক (৭৩)। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি মেলেনি তার, পাননি রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কর্মজীবনে গ্রাম পুলিশ সদস্য হিসাবে চাকরী শেষে বর্তমানে তিনি অভাব অনটনে বৃদ্ধা স্ত্রীসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতির আশায় অফিসে অফিসে ঘুরছেন তিনি।
আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইয়াছিন আলী (২৩) বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশের চাটমোহর উপজেলার হরিপুরে চলে যান। সেখানে আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দলে যোগ দেন।
একাত্তরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হান্ডিয়াল নওগাঁ এলাকায় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ চলছিল। এ সময় চাটমোহরের মির্জাপুর অষ্টমনিষা এলাকা হয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একটি দল সে এলাকায় আসে। পরে নওগাঁ মাজার এলাকায় তাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন তারা। সীমিত অস্ত্র নিয়েও কৌশলী যুদ্ধে সেদিন ৫০ জন পাক সেনাকে হত্যা করেন তারা। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হরিপুরের মজনুর রহমানের নেতৃত্বে চাটমোহর থানায় হামলা চালান। এ সময় থেমে থেমে গোলাগুলি চলে উভয় পক্ষের মধ্যে।
এভাবে হানাদার বাহিনীর সদস্যদেরকে থানার ভেতর টানা দশদিন অবরুদ্ধ রাখার পর বিজয়ের একদিন আগে ১৫ ডিসেম্বর ২০ জন সেনাসদস্য অস্ত্রসহ তাদের কাছে আত্নসমর্পণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর পাবনায় নিজের ব্যবহৃত রাইফেলটি জমা দেন তিনি।
এরপর জীবিকার প্রয়োজনে ছুটে বেড়াতে গিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তালিকাভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করা হয়নি আর। তবে মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতিটুকু পেতে চান তিনি। তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে দিন কাটছে তার।
চাটমোহর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি আমাদের সঙ্গে স্বশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এরপর আমরা তালিকাভূক্ত হলেও তিনি হতে না পারাটা দুঃখজনক।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন কমান্ডার মজনুর রহমান জানান, তিনি আমার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভূক্ত না হওয়ায় বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সে অসহায় জীবন যাপন করছেন। আমি তার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।