শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সাখাওয়াত হোসেন বিপু, জয়পুরহাট
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলাতে সরকারি ও বে-সরকারি প্রায় ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এইসব অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহান বিজয়ের পঞ্চাশ বছর হলেও নির্মিত হয়নি ভাষা শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদ মিনার। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার কথা থাকলেও উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছর হতে চলা ভাষা শহীদদের স্মরণে এইসব অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি।
একদিকে সরকারি তহবিলের অভাব অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অবহেলার কারণে ঐই সব প্রতিষ্ঠানে আজও নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। এতে করে শিক্ষার্থীরা ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে শুরু করে সকল দিবসের তাৎপর্য, ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন, ইফতাদায়ী এবং মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলে প্রায় ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫টিতেই নেই কোন শহীদ মিনার। আর মাত্র ৪২টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সরকারি অথবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এতে করে উপজেলার ঐসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে ঐসকল দিবসের তাৎপর্য, ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেয়া থেকে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আগামী প্রজন্মকে দেশপ্রেমের চেতনায় শাণিত করতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি ছিল বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে সেগুলোতে ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পাড় হয়ে গেলেই সারা বছর পড়ে থাকে অযত্নে-অবহেলায়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েক জন প্রথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদসহ ও জন-প্রতিনিধিরা একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন এখনো করেনি।
কালাই উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মুনীশ চৌধুরী বলেন, কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ভকন নির্মান করা হয় অথচ একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হয়না, এবিষয়টা অত্যন্ত দুঃখ জনক। যেসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার এখনো নির্মান করা হয়নি, সেইসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সম্পর্কে ধারণা দিতে না পারলে আমাদের ব্যার্থতা, তাই আমি সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
শহীদ মিনার কেন নেই এই বিষয়ে কালাই উপজেলার শিক্ষা অফিসার মোছা. ইতিয়ারা পারভীন বলেন, এলাকার প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনা নির্মাণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। যাতে করে আগামীতে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে।
কালাই উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান বলেন, উপজেলার সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনা থাকার খুব প্রয়োজন। তবে, শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা যায়নি।
সানশাইন/শামি