সোমবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: দেশ স্বাধীনের একদিন আগেই বিজয়ের স্বাদ পান চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যাতেই মুক্ত হয়ে যায় তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা।
তবে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পরও বিজয়ের সেই দিন বিষাদের দিনে পরিণত হয়েছিল মুক্তিবাহিনীর কাছে। কারণ ওইদিনই তারা হারিয়েছিলেন ৭ নং সেক্টরের বীর সেনানী শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠকে। তাই ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ১৫ ডিসেম্বর মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
আজ ১৫ ডিসেম্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে জেলার একের পর এক এলাকা শত্রুমুক্ত হবার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর সম্পূর্নরুপে শত্রুমুক্ত হয়। আগের দিন সকাল থেকেই শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর তীরে পাক সেনা ও তাদের দোসর আলবদর-রাজাকারদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয় মুক্তিবাহিনীর। পাক বাহিনীর একের পর এক বাঙ্কার ভেঙ্গে-গুড়িয়ে এগিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধারা।
কিন্তু শত্রুপক্ষের সর্বশেষ বাঙ্কারটি ধ্বংসের সময় তাদের ছোঁড়া গুলিতে হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে যায় এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় নেতা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের প্রাণ। তার সঙ্গে ওইদিনের ওই যুদ্ধে শহীদ হন আরো অন্তত ৮ মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন আরো কয়েকজন।
তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি পাকবাহিনীর। শোককে শক্তিতে পরিনত করে সন্ধ্যা নামার আগেই পাকসেনাদের সমস্ত বাঙ্কার ও আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের দখল নেয় মুক্তিবাহিনী। পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। একাত্তরের সেই দিনটির কথা স্মৃতিচারণ করে আজো উদ্বেলিত হন মুক্তিযোদ্ধারা। যদিও ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের মৃত্যু বিজয় উল্লাসকে ম্লান করে দিয়েছিল অনেকটাই। ১৪ ডিসেম্বরই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে অস্ত্র উচিয়ে বিজয়ের ঘোষণা দেন মুক্তিযোদ্ধারা।
তবে এদিন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে বীরশ্রেষ্ঠের মরদেহ ঐতিহাসিক সোনামসজিদ চত্বরে সমাহিত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ে পতাকা উড়ানো হয় ১৫ ডিসেম্বর সকালে। সেই থেকে ১৫ ডিসেম্বরকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা।