সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ষাট বছরের বেশি বয়সী এবং সম্মুখসারির কর্মীরা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বুস্টারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, বুস্টার আমরা দেব। যারা ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার যারা আছে, তাদেরকে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সুরক্ষা অ্যপে কিছু আপডেট করতে হবে। আমরা আশা করছি এ মাসেই কাজ শুরু করতে পারব।”
বুস্টার ডোজের পাশাপাশি এখনও যারা টিকার আওতার বাইরে রয়েছেন, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে যারা এখনও এক ডোজও পায়নি তারা। পাশাপাশি যারা বয়স্ক, তাদেরকে দেওয়া হবে বুস্টার।”
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৬ জন অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন। আর তাদের মধ্যে ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১ জন পেয়েছেন দুটি ডোজ। এই হিসাবে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মোটামুটি এক চতুর্থাংশ কোভিড টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় ধনী কিছু দেশ বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দিচ্ছে নাগরিকদের, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ। বাংলাদেশের গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পাওয়ার আগে তৃতীয় ডোজের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর এখনও দেশেও টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে না, সেজন্যই বুস্টার প্রয়োজন। এরই মধ্যে বহু দেশে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। দুদিন আগে বাংলাদেশেও দুজনের মধ্যে এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে বুস্টার ডোজের বিষয়ে কী করা উচত সে বিষয়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির মতামত চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কমিটি বৈঠক করে সোমবার জানায়, নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত টিকা নিশ্চিত করে ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনার, যাদের দুই ডোজ টিকা অন্তত ছয় মাস আগে দেওয়া হয়েছে, এমন জনগোষ্ঠীকে কোভিডের বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে। পরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ‘ওমিক্রন’ পরিস্থিতি এবং বুস্টার ডোজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। বুস্টার ডোজ আগের মত ‘ফ্রি’ দেওয়া হবে, না দাম নেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করে একটি নীতিমালাও করা হবে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের হাসপাতালগুলো যেভাবে ছিল আমরা সেভাবেই রেখেছি। ৮০টি অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের কাজ চলমান; এর মধ্যে ৩০টি স্থাপনের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। গতকালও ঢাকায় মিনিটে প্রায় এক হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার অক্সিজেন জেনারেটর উদ্বোধন করা হয়েছে।
“আমাদের এখন অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা তিনশ টন হয়ে গেছে। অতীতে এটা ডেল্টার সময় সবচেয়ে বেশি লেগেছিলো তিনশ টন প্লাস। আমরা এখন সে ক্ষমতা নিজেরাই অর্জন করতে পেরেছি।” মন্ত্রিসভার আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে টিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ কোটি টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এ মাসে আরও দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হাতে প্রায় ৪ কোটি টিকা আছে। টিকার কোনো অসুবিধা নেই।”
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে শিক্ষার্থীদের টিকাদান পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন যে স্কুলের ছাত্রদের টিকার অগ্রগতি। আমি বলেছি, সেখানে আমরা সেরকম অগ্রগতি লাভ করতে পারিনি। আমরা এটা যেহতু ফাইজার দিতে হচ্ছে। দেশের সব কর্নারে তো কোল্ড চেইন নেই আমাদের সেভাবে।
“কাজেই যে কয় জায়গায় আছে, সেখানেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি। এটা যাতে আরও বাড়ে, সে জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আরও এক হাজার টিকার বুথ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে আড়াই হাজার বুথ থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।”