শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান,বাঘা : দিনে পরিমিত রোদ, রাতে হালকা কুয়াশা। নেই পোকা-মাকড়, কিংবা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। সর্বোপরি এ বছর আলু চাষে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা। লাভের আশা নিয়ে এখন আলু ক্ষেত পরিচর্যায় বাস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীগণ। এর মধ্যে বাঘার প্রমত্তা পদ্মার চরে উৎপাদিত আলুর গুনগত মান ভালো হওয়ায় এটি স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি রপ্তানি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সংশ্লিষ্ঠদের মতে, এ বছর শীত মৌসুমে রাজশাহীতে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আলুর চাষাবাদ হয়েছে। আর প্রতি হেক্টরে আলুর উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৬ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন। তবে এ লক্ষ মাত্রার চেয়ে এ বছর অধিক পরিমান আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
এদিকে থেকে আলু প্রধান এলাকা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কৃষকরা আগাম আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেতে চলেছেন। বিশেষ করে উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল সহ সমতল এলাকার শত-শত কৃষক এবার আলু চাষে ভালো দাম পাওয়ায় তাঁরা আলু চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা বলছেন, গত বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ বছর অনেকেই আলু নিয়ে আতঙ্কে ছিলো। কিন্তু এবার বাজার মূল্য ভাল হওয়ায় সবাই আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ অঞ্চলের আলু স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশা-পাশি আমদানী করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাঘা উপজেলায় আলু চাষের লক্ষমাত্রা ছিল প্রায় তিন হাজার হেক্টর। যা অতিক্রম করে চাষাবাদ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর। এরমধ্যে অর্ধেক এর বেশি লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছিল পদ্মার চরাঞ্চলে। সে মোতাবেক চরবাসীদের অনেকেই আগাম আলু চাষকরে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। তাঁদের দেয়া তথ্য মতে, বাঘার চরাঞ্চলের আলুর গুনগতমান ভালো। এ কারনে এখান থেকে প্রতি আলু মৌসুমে বাস এবং ট্রাক যোগে আলু চালন দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান জানান, তিনি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষা করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন ।এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় আলুর ফলন ভালো হচ্ছে। অনুরুপ কথা বলেন, সমতল এলাকার বাউসা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক, পীরগাছা গ্রামের নবাব আলী ও তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক নাজমুল হক।
বাঘার চরাঞ্চলের চেয়ারম্যান আজিজুল আজম বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলকে এক কথায় সবজি ভান্ডার বলা হয়। কারণ এখানে এমন কোন সবজি নেই যা উৎপাদন হয়না। তার মতে, চরাঞ্চলে কাঁচা মরিজ ও পেঁয়াজ-রসুন থেকে শুরু করে আলু,বেগুন, টমেটো, গাজর, সিম, করলা, পুইসাক, লাও ,মিষ্টি কুমড়া, ও মুলা-সহ সকল প্রকার সাক-সবজি উৎপাদন হয় এবং এ সমস্ত উৎপাদিত পন্য স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমদানী করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, বাঘার মাটি কৃষি আবাদের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। বিশেষ করে এই উপজেলার চরাঞ্চলে সব ধরনের সবজির উৎপাদন ভাল হয়। এ দিক থেকে এবার সমতল এলাকাতেও অনেক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। তাঁর মতে, এবার শীত মৌসুমে লক্ষ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমান আলু চাষাবাদ হয়েছে দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তিনি সকল প্রকার কৃষি আবাদের জন্য কৃষকদের নিয়ে মাঝে-মধ্যে সমাবেশ করা সহ নানা পরামর্শ এবং কৃষি প্রনদনা সহায়তা দিয়ে থাকেন বলে জানান।