শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ কারণে র্যাবের সাবেক ও বর্তমানসহ সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার সকালে রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে আনা হয়েছিল বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মারা যাওয়ার ঘটনায় র্যাবকে দায়ী করে বর্তমান পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমদসহ সাতজনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
শনিবার সকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আমাকে ফোন করলেন এবং জানালেন যে, বাইডেন অ্যাডমিনস্ট্রেশন একটা নতুন নিয়ম করেছে।” র্যাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এমন একটি ডিসিপ্লিনড … তাকে তারা লিসটেড করেছে, ওখানে যারা কাজ করে হেড অব দি ইন্সটিটিউশন, তাদেরও তারা স্যাঙ্কশন করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
“আর এখানে নতুন এক ঢং বের হল- হেড অব দি ইন্সটিটিউশন, তাকে কী করে… এগুলো খুব দুঃখজনক।” এই খবর জানার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনা হয়েছিল, আমার পররাষ্ট্র সচিব উনার সাথে আলাপ করেছেন। উনিও অনেকটা সারপ্রাইজডের মতো। এখন দেখি আর কী হয়।” এতে সম্পর্কের দিক দিয়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী মোমেন বলেন, “আমার মনে হয় না… হবে কিনা সেটা ডিপেন্ডন্স অন ইউএসএ, ওরা বলতে পারে।
“তবে এইটুকু বলি যে দেশগুলো উন্নতি করে, যে দেশের সরকার অনেক ভালো কাজ করে, অনেক সময় তাদের উপর আক্রমণ হয়। আপনি ভালো কাজ করলে তখন সমস্যা হয়।” মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বরাবরই সমালাচনার মুখে থাকা র্যাবকে নিয়ে মোমেন বলেন, “যেটার কারণে এদেশে সন্ত্রাস নাই, যার কারণে বাংলাদেশি লোকেরা সন্ত্রাসবিহীন বাংলাদেশে থাকে, যার কারণে অনেকজনের অপকর্ম দূর হয়। এবং বাংলাদেশের জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের ওপর যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস আছে।”
সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কারণ কী- প্রশ্নে তিনি বলেন, “কিছু কিছু এনজিও আর কিছু হিউম্যান রাইটস গ্রুপ ওদের (র্যাবের) বিরুদ্ধে নাকি অভিযোগ করেছেন। তার প্রেক্ষিতে এবং তারা নিজেরাও এনালাইসিস করে..”যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকাতে প্রতিবছর ছয় লক্ষ লোক নিখোঁজ হয় এবং এরা কিভাবে নিখোঁজ হয়, আমেরিকান সরকার জানে না। আর প্রতিবছর পুলিশ হাজার খানেক লোক মেরে ফেলে।
“আমেরিকাতে এই যে ছয় লক্ষ লোক নিখোঁজ হয়, তার জন্য কোনো অথরিটি, হেড অব অথরিটি, তাদের তো কোনো শাস্তি হয় না। এগুলো হয়ত লোক দেখানো একটা অপচেষ্টা, কারণ সব দেশেই কিছু লোক নিখোঁজ হয়, আমেরিকা তো বললাম, এবং হাজার হাজার লোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়।” “আর বাংলাদেশে নাকি ১০ বছরে এই ৬০০ জন, এই র্যাব নাকি মেরেছে। কাকে মেরেছে, তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা একটা বলে দেন ‘ওইখানে’। আমরা আশা করব, তাদের মোর ফ্যাক্ট বেইজড হওয়া উচিৎ,” বলেন মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত মিলারকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন কর্তৃক তলবের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে শনিবার এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো ধরনের পূর্বালোচনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র সরকার একতরফা সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
“তিনি উল্লেখ করেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যেসব বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপে ফ্রেমওয়ার্কসহ বিভিন্নভাবে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও কোনো ধরনের আভাস দেওয়া ছাড়াই এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত।” পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সংস্থাকে খাটো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটি সন্ত্রাস, মাদক চোরাচালান এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে ‘সামনের সারিতে’ রয়েছে।
“র্যাবের বিরুদ্ধে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো বিচারপ্রক্রিয়া ও জবাবদিহিতাসহ বিভিন্ন বিষয় এর আগে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাখ্যা কেবল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে নয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন ফোরামেও বহুবার দেওয়া হয়েছে।” মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, যেসব ঘটনা উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ’তথ্যভিত্তিক’ হওয়ার পরিবর্তে ‘যাচাইহীন ও প্রমাণহীন’ মনে হচ্ছে।
যে সব দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কাতারে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদেরও রাখায় হতাশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেছেন, কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ এলে তার প্রতিকারের জন্য নির্দিষ্ট আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মেনে চলে বাংলাদেশের সব পোশাকি বাহিনী, র্যাবও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।
“মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য অনেক দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে সংঘটিত হওয়ার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। তাই বলে এর জন্য কোনো সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার জন্য বেছে নেওয়ার যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের সরকারের উদ্বেগ রাষ্ট্রদূত মিলারকে জানানো হয়েছে। তিনি তা তার সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন।