বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
লাবু হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটির পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। এক বছর মেয়াদের এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই পাঁচ বছর চলছে রাবি শাখা ছাত্রলীগ। চার বছর আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। ইতোমধ্যে বর্তমান কমিটির অনেক নেতা শিক্ষাজীবন শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে আবার যারা সক্রিয় আছে তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন!
বারবার আশ্বাস দিয়েও কমিটি না হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, অন্যদিকে সক্রিয়রা হতাশা নিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক কাঠামো। বাড়ছে গ্রুপিং, তৈরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
এদিকে বর্তমান কমিটিকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন পদপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের এই কমিটিকে ভেঙে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক কমিটির প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেদ্রীয় ছাত্রলীগ। হিসেব অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টি হলের কমিটি ঘোষণা করেন তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব। এরপর বর্তমান কমিটি হল কমিটি দিতে সক্ষম হয়নি। যদিও গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারিতে হল সম্মেলনের উদ্যোগ নেয় বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি। কিন্তু সম্মেলনের ঠিক দুদিন আগে তা স্থগিত করে দেয়া হয়। ফলে হল সম্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠা নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়। কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে অনেক নেতাকর্মী। অনেকেই আবার রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলের পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা জানায়, ২০২০ সালে স্থগিত হওয়া হল সম্মেলনে হল পদপ্রত্যাশীদের প্রায় সাড়ে ৪০০টি সিভি জমা পড়ে। প্রত্যেক সিভির জন্য পদপ্রত্যাশীদের নিকট রাবি শাখা ছাত্রলীগ ১ হাজার টাকা করে নেয়। এছাড়া পদপ্রত্যাশীরা হল সম্মেলনকে ঘিরে নিজের পকেট থেকে মোটা অংকের টাকাও ব্যয় করেন। পরে সম্মেলন না হওয়ায় অনেকটা হতাশ তারা। নতুন করে কবে হল সম্মেলন হবে! আদৌ হবে কিনা! সেটা নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন তারা।
যদিও ক্যাম্পাস খোলার পর থেকেই নতুন সম্মেলনের আশায় চাঙা হচ্ছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। হল সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে নিয়মিত মিছিল মিটিং করছেন। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের পছন্দনীয় পদে জায়গা পেতে জনবল গোছাতে শুরু করেছে পদপ্রত্যাশীরা।
এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশনা না থাকলেও রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নিজ নিজ ভাবে। অনেকেই নতুন কমিটির দাবি জানিয়ে ধরণা দিচ্ছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ছাত্রলীগের কেদ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে ইতোমধ্যেই বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, হাবিবুল্লাহ নিক্সন, মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু, মেহেদী হাসান মিশু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব ও উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দূর্জয় এবার আলোচনায় রয়েছে। ক্যাম্পাসে তাদের অনুসারি নিয়ে নিয়মিত মিছিল মিটিং করছেন।
শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ নিক্সন বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে জেলা শাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ একবছর। ২০১৬ সালে আমাদের কমিটি হয়েছে সে হিসেব অনুযায়ী ২০১৭ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ। এর মাঝে ২০১৯ সালে কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কমিটি না দেওয়ার মনমানসিকতা এবং হল কমিটির অজুহাতে কমিটি দেওয়া হয়নি। পরে কোভিডের জন্য দেওয়া হল না। এর মাঝে প্রায় ২৭০জন নেতাকর্মীর মধ্যে ২২০ জনই বিবাহ, চাকরি বা ছাত্রত্ব না থাকায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। ফলে সংগঠন একদম ঝিমিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনকে গতিশীলের উদ্দেশ্যে আমরা চাই দ্রুত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে কমিটি দেওয়া হোক। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রাণসঞ্চার হোক।’
পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দূর্জয় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই আসে পাঁচ বছরের জন্য। সেখানে এক কমিটিতেই পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয় না পেয়ে রাজনীতি ছেড়ে অন্যদিকে ঝুঁকছে। হল সম্মেলনের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাদের ‘মূলো ঝুলিয়েছেন’। তাদের স্বদিচ্ছা থাকলে পাঁচ দিনের ভিতর হল সম্মেলন করতে পারত। আমি ব্যক্তিগতভাবে আর হল সম্মেলন চাচ্ছি না। এখন আর সেই সময় নেই। আসলে কমিটি সচল না থাকলে রাজনৈতিক উর্বরতায় মরিচিকা পড়ে যায়। এজন্য খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দেয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরাও কমিটি দিতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে করোনা মহামারির কারণে আমরা হল সম্মেলন করতে পারিনি। এখন আমরা আগে হল কমিটি দেব তারপর সম্মেলনের প্রস্তুতি নেব। তারপরও আমরা প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যখনই বলবে আমরা সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুত আছি।’
কবে নাগাদ হল কমিটি দিবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি মাসের মধ্যে হল কমিটি দেওয়ার কথা ভাবছি। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি দেওয়ার জন্য সম্মেলনের আয়োজন করব ‘
নতুন কমিটি দেওয়ার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।