সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মোঃ তারেক রহমান,বিশেষ প্রতিনিধি :উদয়ের পথে শুনি কার বানী, ভয় নাই তার ভয় নাই। নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। কবি নজরুল ইসলামের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এমন লাক্ষো তরুণ। উদয়ের পথে যাদের বাণী সর্বত্র পাওয়া যায়। এমন একজন তরুণ রশীদ রাহী।
তরুণেরা করবে ভালো কাজ এ লক্ষকে সামনে রেখে ২০১৭ সালে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন, “হেল্প পিপল” প্রতিষ্ঠা করেন আল রশীদ রাহী।প্রথমে তেমন কেউ তার সাথ দেইনি তাই তিনি নিজেই সমাজের অসংগতি গুলো নিয়ে কাজ করতেন।
তবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার আগে তাকে একটা জিনিস বার বার ভাবিয়েছে, কিভাবে অসহায়দের জন্য কিছু করা যায়।কিভাবে তরুণদের দ্বারা ভালো কাজ করানো যায়।
কিভাবে শুরু করবো? কেমন ভাবে করবো? একা করবো নাকি বন্ধুবান্ধব নিয়ে করবো? এমন হাজারো প্রশ্নের মধ্য দিয়েই মানবতার হাত বাড়াতে থাকেন অসহায়দের মাঝে।
করোনার সেই ভয়ংকর সময়ে নগরীতে ছিন্নমূল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে ‘হেল্প পিপল সামাজিক সংগঠন’।
এটি ছোট্টদের একটি বড় যুদ্ধ। সংগঠনের সবাই ছোট এবং ছাত্র।তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি এই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
ব্যতিক্রমী এই সংগঠন অসহায়দের খুঁজে বেড়ায়। অসাধারণ কাজটি করে চলেছেন মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা স্বপ্নবাজ তরুণরা। নগরীতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা কম নয়। করোনায় অসহায় মানুষের দুর্দশা দেখে রাহীর সাথে একদল যুবক ‘হেল্প পিপল সামাজিক এ সংগঠনে যুক্ত হয়ে তার হাতে হাত রেখে কাজ শুরু করেন।
স্বল্প পরিসরে হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সংগঠনটি। বর্তমানে সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে তারা একবেলা খাবার বিতরণ করছেন, পাশাপাশি শীতের কাপড় পড়িয়ে দিচ্ছেন অসহায়দের, রমজান মাসে দিচ্ছেন ইফতারি শুধু কি তাই ? ঈদে দিচ্ছেন ঈদ সামগ্রী পাশাপাশি পথশিশুদের সালামি।সুবিধাবঞ্চিত কোন মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে সংগঠনের তরুণ যুবকেরায় নিজ খরচে গিয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে আসেন।এ পর্যন্ত তারা ৩০০ অধিক মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করে সহযোগিতা করেছেন।
ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর আনন্দ থেকে তাদের পথচলা ‘দুই টাকার হোটেল’ খাবার বিনামূল্যে বিতরণ হলে অনেকের সংকোচ তৈরি হবে- এই ধারণা থেকে খাবারের মূল্য দুই টাকা ধরা হয়েছে। যারা এ খাবার বিতরণ করছেন, তারাও খুব একটা সচ্ছল নন। তাদের কোনো তহবিল নেই, বড় কোনো অর্থদাতা নেই। নিজেদের প্রতিদিনের খরচ থেকে টাকা জমিয়ে প্রতি মাসের শুরুতে সবার টাকা একত্র করে কেনা হয় চাল, ডাল, লবণ, মসলা, তেলসহ রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ। তারপর নিজেরাই রান্না করে খাওয়াচ্ছেন । হেল্প পিপল সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। অধিকাংশই রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
প্রচন্ড স্বপ্নবাজ তরুণ রাহী। সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ছোট বেলা থেকেই মানুষের জন্য এবং দেশের জন্য কিছু করার একটা প্রবনতা ছিলো তার মধ্যে। তারই প্রেক্ষিতে নানান কাজ করার মাধ্যমে একজন সেচ্ছাসেবী হয়ে উঠেছেন রশীদ রাহী।
ভালো লাগার মুহূর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, “যখন আমি অসহায় মানুষ ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করি, তখন আমার খুব ভালো লাগে। আমার প্রাপ্তি হলো মানুষের ভালোবাসা, মানুষের দোয়া। কাজে তার অনুপ্রেরণা ছিলো অসহায় মানুষের মুখে ফোটানো হাসি । প্রতিটা স্বেচ্ছাসেবকের লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্যের জন্য কিছু করা। তিনিও এই লক্ষ্য নিয়ে চলেন।
তিনি বলেন, আমি চাই এই পৃথিবীটা এমন হোক যেখানে অসহায় মানুষ থাকবে না, যেখানে অভাব থাকবে না, যেখানে ঘুমাবে না কেউ না খেয়ে ।তরুণেরা করবে ভালো কাজ।সমাজ হবে নেশা মুক্ত।
বর্তমানে হেল্প পিপল সংগঠনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার মূল পরিকল্পনা তরুণদের দিয়ে ভালো কাজ করানো। যাতে হাতে মাদকের বিপরীতে ভালো কাজ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে।তাছাড়া একটা স্কুল করার পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে ঠাই পাবে সমাজের বিশেষ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বাচ্চারা।