শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিস ওকসের ফুল লেংথ বল নিখুঁত ড্রাইভে মিড-অন দিয়ে সীমানায় পাঠিয়ে হুঙ্কার দিলেন ট্রাভিস হেড। ব্যাট ও হেলমেট তুলে ধরে উদযাপন করলেন সেঞ্চুরি। গ্যাবায় প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে একশ বলের নিচে তার শতরান করার দিনে আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন ডেভিড ওয়ার্নার। মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি বাঁহাতি এই ওপেনার।
এই দুই জনের সঙ্গে ভালো করলেন মার্নাস লাবুশেনও। তাদের দৃঢ়তায় অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচে বড় লিডের পথে অস্ট্রেলিয়া। ব্রিজবেনে দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৩৪৩। প্রথম দিন ইংল্যান্ডকে ১৪৭ রানে থামিয়ে দেওয়া দলটি এগিয়ে ১৯৬ রানে।
আগের দিন ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার পর এক সেশন বাকি থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টির বাধায় ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। নতুন দিনের শুরুতে স্বাগতিকদের বড় রানের দৃঢ় ভিত গড়ে দেন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ১৫৬ রানের জুটি। ৭৪ রানে ফেরেন লাবুশেন। ওয়ার্নার থামেন ৯৪ রানে। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হলেন তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরের পর দলে ফেরা হেড উপহার দেন খুনে এক ইনিংস। ৮৫ বলে তিন অঙ্কে পা রেখে গড়েন অ্যাশেজে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম শতকের কীর্তি। দিন শেষে ১১২ রানে অপরাজিত তিনি। মিচেল স্টার্ক খেলছেন ১০ রানে। অ্যাশেজে ১৫ বছরে প্রথমবার জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছাড়া খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেট পায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মার্কাস হ্যারিসকে ফিরিয়ে দেন অলিভার রবিনসন।
কয়েক ওভার পর ফিরতে পারতেন ওয়ার্নারও। ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে এসে চতুর্থ বলেই তাকে বোল্ড করে দেন বেন স্টোকস। কিন্তু ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যান ১৭ রানে থাকা স্বাগতিক ওপেনার। ওই ওভারের প্রথম তিনটি বলই ছিল ‘নো।’ নিজের প্রথম পাঁচ ওভারে মোট ১৪টি ‘নো’ বল (ওভারস্টেপ) করেন স্টোকস।
পরে পেসারদের সহায়ক উইকেটে ওয়ার্নার কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন। তাকে সঙ্গ দেওয়া লাবুশেন পঞ্চাশে পৌঁছান ৭১ বলে। লাঞ্চ বিরতির পর পঞ্চম বলেই ওয়ার্নারকে আবার ফেরানোর সুযোগ আসে ইংল্যান্ডের সামনে। কিন্তু রবিনসনের বলে ৪৮ রানে থাকা এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি দ্বিতীয় স্লিপে থাকা ররি বার্নস। পরের ওভারে ওয়ার্নার ১০২ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ।
৬০ রানে আবারও বেঁচে যান ওয়ার্নার। মার্ক উডের ফুল লেংথ বল লেগ সাইডে খেলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। শর্ট লেগে থাকা হাসিব হামিদের করা থ্রো স্টাম্পে লাগলে রান আউট হয়ে ফিরতে হতো তাকে। দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন জ্যাক লিচ। ওভারের প্রথম বলেই এই স্পিনারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান লাবুশেন। পরের বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৭৪ রানে।
আসরের শুরুটা ভালো হলো না স্টিভেন স্মিথের। তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন মার্ক উড। কেবল ১২ রান করতেই জস বাটলারের গ্লাভসে ধরা পড়েন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। চা-বিরতির পর প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ান রবিনসন। তার স্লোয়ারে কাভারে ধরা পড়েন ওয়ার্নার। ২ ছক্কা ও ১১ চারে ৯৪ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। পরের বলেই ক্যামেরন গ্রিনের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন রবিনসন।
২৯ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে পাল্টা আক্রমণে টেনে তোলেন হেড। বেন স্টোকসকে ওভারে মারেন তিন চার। ছক্কায় ওড়ান জো রুটকে। হেডকে সঙ্গ দিতে পারেননি অ্যালেক্স কেয়ারি। টেস্ট অভিষেকে এক চারে ১২ করা এই কিপার-ব্যাটসম্যান ওকসের শিকার। দল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও দ্রুত রান তুলতে থাকেন হেড। ৫১ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান পরের ৩৪ বলেই পা রাখেন সেঞ্চুরিতে। হয়ে যায় গ্যাবায় একশ বলের নিচে প্রথম সেঞ্চুরি।
তৃতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সেই সেঞ্চুরিতে পৌঁছান হেড। ব্রিজবেনে এক সেশনে শতরান করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও টিকতে পারেননি। স্টার্ককে নিয়ে বাকিটা সময় নিরাপদে কাটিয়ে দেন হেড।