সর্বশেষ সংবাদ :

পিঠার আসল স্বাদ পেতে বিলুপ্ত প্রায় ঢেঁকি স্থাপন করছে  গ্রামের মানুষ

মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি:বগুড়ার শেরপুর উপজেলাসহ গোটা উত্তরা ল থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ সামগ্রী। এখন ওই সব সামগ্রী রূপকথার গল্পমাত্র এবং বিলুপ্ত হয়ে স্থান পেয়েছে কাগজে কলমে, বইয়ের পাতায়। ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধান ভাঙা সহ প্রায় সব কিছুই চলে এখন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। তাই শীতে মজাদার পিঠা তৈরীর জন্য চাল গুড়া করতে হয় মিলে। এতে ঐতিহ্যময় পিঠার স্বাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শীতকালে নতুন পুরাতন জামাইদের নিয়ে হবে পিঠা উৎসব। এই উৎসব কে ঘিরে পিঠার স্বাদ ঠিক রাখতে তাই বিলুপ্ত প্রায় ঢেকি স্থাপন করছেন গ্রামের মানুষ।
ধান ভাঙার মেশিন (রাইস মিল) প্রচলন হওয়ার পূর্বে ঢেঁকিই ছিল ধান থেকে চাউলে পরিণত করার একমাত্র মাধ্যম।। তখন গম, কলাই, চাউলকে আটায় পরিণত করা হতো জাতার মাধ্যমে। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ এ তিন মাস ঢেঁকি ও জাতার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো গ্রামের গৃহবধূ, মা, বোন, খালা, নানীরা। সারা বছরের চাল, আটা করে নিতো। তারা কাকডাকা ভোরে উঠে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার কাজ করতো এবং বিভিন্ন সুরে গীত গাইতো। এক বাড়ীর ধান ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেলে তাদের দেখা দেখি অন্যান্য বাড়ীতে ঘুম থেকে জেগে ধান ভাঙার কাজ শুরু করে দিতো।
এখন ওই সব রূপকথার গল্প মাত্র। বর্তমানে আমরা যা খাই তা ভেজালযুক্ত, নোংরা পরিবেশে তৈরী। গ্রামের মা বোনেরা আগেই মুড়ির ধান থেকে চাউল তৈরী করে রাখতো। ফজরের নামাজ আদায় করে মুড়ি ভাজার কাজটি শুরু করে দিতো। মা বোনের হাতে ভাজা মুড়ি কতই না মজা লাগতো। ঘ্রাণে আপন মনে খেতে ইচ্ছা করতো। এখন বাজার থেকে ভেজাল যুক্ত, রাসায়নিক সার যুক্ত মুড়ি, চিড়া খেতেহচ্ছে আমাদের। যার কোন স্বাদ নেই, খেতেও ইচ্ছা হয় না।
এমন কোন কৃষকের  বাড়ী ছিল না যে বাড়ীতে ঢেঁকি, জাতা ছিল না। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে রূপসী বাংলার ঢেঁকি, জাতা ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। এ গুলোকে সংরক্ষন ও সংগ্রহ করার কোন ব্যবস্থা নেই। গ্রামীণ ওই সব লোকজ শিল্প গুলোকে সংরক্ষণ করা না হলে এক সময় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগামী প্রজন্ম এ গুলো চিনতে পারবে না।
এই কথা চিন্তা করেই বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন করে ঢেঁকি স্থাপন করছেন। যাতে করে পিঠার আসল স্বাদ পাওয়া যায় এবং আগামী প্রজন্ম গ্রাম বাংলার এই সকল ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।
উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি ঢেঁকি বসিয়ে চালকে আটায় পরিনত করছেন। উদ্দেশ্য এই শীতে জামাইদের পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দিবেন এবং ধুমধাম করে উৎসব করবেন। তারা জানান, যান্ত্রিক মিলে চাল আটা করলে সে চালে পিঠা ভাল হয়না। তাছাড়া সেই আটা বেশিদিন সংরক্ষন করা যায়না। তাই পিঠার আসল স্বাদ পেতে তারা নতুন করে ঢেঁকি স্থাপন করেছেন।

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ | সময়: ৯:৪০ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ