মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি, ৫০তম আন্তর্জাতিক ও ২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের উদ্যোগে গত ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে শহরের সকাল বাজার এলাকায় বিদ্যালয় চত্বরে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান (২৫) ও রহিমা খাতুনের(২২) বিয়ের আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার রীতি অনুযায়ী আর দশটা বিয়ের মতোই উভয় পরিবারের সম্মতিতে দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীন এই বিয়েতে উৎসবে মেতে ওঠেন নানা শ্রেণি পেশার প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। ব্যতিক্রমী এই বিয়ে অনেকেরই নজর কেড়েছে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান বরের সাজে মাথায় টুপি পরে শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে শেরপুর পৌরশহরের সকাল বাজার এলাকায় কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। যেখানে স্থাপিত অস্থায়ী সংবর্ধনা মঞ্চে আগে থেকেই মাথায় টিকলি পরে কনের সাজে বসেছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রহিমা খাতুন। বরকে গ্রহণ শেষে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সঙ্গে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। তারপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ওই দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। ৭০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে এই বিয়েটি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর তার নিজ বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নগর পলীপালাশ গ্রামে। সে আব্দুর রউফের ছেলে। তিনি জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি বর্তমানে স্থানীয় মহিপুর সরকারী দুগ্ধ ও প্রাণি উন্নয়ন খামারে চাকরি করেন। এদিকে কনে রহিমা খাতুন শেরপুর পৌরশহরের গোসাইপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর মেয়ে। বাড়ীর পাশেই অবস্থিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি দর্জির কাজও শিখেছেন এই প্রতিবন্ধী। তিনিও জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম, শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকা, শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু, কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটি আমাদের সময়ের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম শরীফ, আনন্দ টেলিভিশনের প্রতিনিথি বাধন কর্মকার প্রমুখ।
শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু জানান, সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীনভাবে এই দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে হয়েছে। বরযাত্রী ও অতিথিদের আপ্যায়নসহ বিয়ের সব খরচ তার সংগঠনটির পক্ষ থেকেই করা হয়। এছাড়া ওই দম্পতির নতুন সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা প্রবাসী উম্মে সুফিয়া বিউটি বলেন, এই বিয়েতে আমি নিজে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি এবং এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে খুব গর্ববোধ করছি।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজে আজকাল বোঝা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝা নয়। তাদেরকে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও আমাদের সম্পদ হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধীরাই এভাবে একে অপরের প্রতি যদি হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।