সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার : জাল দলিল করে রাজশাহী মহানগরীতে বিহারীদের ৩৩ কাঠা জমিসহ পুকুর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৬টি বিহারী পরিবার শনিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন। সম্পত্তি রক্ষায় তারা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সহায়তা কামনা করেছেন।
১৬টি বিহারী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দিলরুবা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশভাগের পর নগরীর সাগরপাড়া বল্লভগঞ্জ এলাকায় ১৬টি বিহারী পরিবার এসে বসবাস শুরু করে। তাঁদের সাড়ে ১৮ কাঠা পুকুর এবং পুকুরপাড়ে সাড়ে ১৪ কাঠা জমি মিলে মোট ৩৩ কাঠা সম্পত্তি ছিল। সে সময় বিহারী সমাজে সর্দার প্রথার ছিল। জমিটি ছিলো আজগর আলীর। ভারত-পাকিস্তান বিভাগের পর তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে ওই জমি ক্রয় করেন। স্বাধীনতার আগে হানিফ সর্দার সিদ্ধান্ত নেন, পুকুরটি রাজারহাতা এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমানকে মাছ চাষের জন্য দেওয়া হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বছরে দেড় হাজার টাকা এবং কিছু মাছ দেওয়ার শর্তে মজিবরকে পুকুরটি মৌখিকভাবে মাছচাষের জন্য দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব বিহারী পরিবারের ঘরবাড়ি লুটপাট হয়। অনেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যান। তাঁরা আর পুকুরটির দিকে ঠিকমত নজর দিতে পারতেন না। এ সুযোগে মজিবর রহমান মারা যাওয়া কয়েকজন বিহারীর স্বাক্ষর জাল করে নিজের নামে পুকুরের দলিল বানিয়ে ফেলেন বলে বিহারীদের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
তাঁরা বলেন, একাত্তরে ঘরবাড়ি লুট হওয়ার পর বিহারীরা আর জমির কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। মজিবর রহমান মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে বিএনপি নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর দিলদার আলী এবং তাঁর বন্ধু মোহাম্মদ নুরু একসঙ্গে পুকুর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাঁরা পুকুরের তিনপাশে কিছুটা জায়গা ভরাট করে আত্মীয়-স্বজনদের তিনটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। তাঁরা এখন পুরো পুকুরটিই এখন ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিহারী পরিবারের জাব্বার আলী, সাইদা খাতুন, রিজিয়া খাতুন, ঈসা আলী, হালিমা বিবি, সাবেরা খাতুন, হাসিনা, দুলারি, মফিজা বিবি, শাকিল হোসেন, সাগরা খাতুন, মো. সাব্বির, মো. কালু, আক্তার আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পুকুরপাড়েই বাস করেন। তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে দিলদার আলী বলেন, ‘আমরা জমির আরএস রেকর্ডীয় মালিক। আমরা ওয়ারিশসূত্রে এখন জমির মালিক। ১৯৭৪ সালে ১৭ জন ব্যক্তির কাছ থেকে আমার বাবা পুকুরটা কিনেছিলেন। সুতরাং, জাল দলিল করার অভিযোগ সঠিক নয়।’
মোহাম্মদ নুরু বলেন, ‘আমি দিলদারদের কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছি। বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছি, বিহারীরা দিলদারের বাবার কাছে ওই জমি বিক্রি করেছিল। আমি উকিল-মহুরিদের কাগজপত্র দেখিয়ে নির্ভেজাল জায়গা কিনেছি। এখন কিছু অসাধু ব্যক্তি টাকা-পয়সা খাওয়ার জন্য বিহারীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জমির খাজনাও দিয়েছি। বিহারীরা দাবি করছে জমি তাঁদের। তাঁদের যদি জমি থাকে তাহলে তাঁরা মামলা করছে না কেন? কোর্ট আছে, ভূমি অফিস আছে, মামলা করছে না। খালি বলছে- জমি আমাদের, আমাদের, আমাদের।’