আবরার হত্যাকাণ্ডে
দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফরহাদ হত্যার। রোববার দিবাগত রাতে তাঁকে তাঁর আবাসিক হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে হলের সিড়ির নীচে ফেলে দেয়। এই নির্মমতার চিত্রের কিছু অংশ হলের সিসি ক্যামেরাতে ধরা পড়ে। সে সব চিত্র ছাত্রলীগের ওই সব নেতার কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। এমন নির্মমতা একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটতে পারে এটা ভেবে সত্যি অবাক হতে হয়। এই পাষন্ড কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার দেশবাসীর সাথে আমরাও জানাচ্ছি। একই সাথে ছাত্রলীগের নামে কিছু ব্যক্তি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তা আমলে নিয়ে সে সবের সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি।
কুষ্টিয়ার এক মধ্যবিত্ত ঘরের মেধাবী সন্তান ছিলেন আবরার ফাহাদ। নিজ যোগ্যতা দিয়েই সে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এবং ক্লাশ ও পরীক্ষার মাঝে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। নিয়মিত নামাজ পড়তেন। স্বাভাবিক ভাবে তাঁর ভেতর মা, মাটি ও মানুষের প্রতি মমত্ব বোধ ছিল। আর হয়তো সে কারণে কোন অসংগতি দেখলে তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ মতামত দিতেন। এটা একজন সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে তিনি করতেই পারেন। এটা কোন অন্যায় নয় বরং এ তাঁর সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। অথচ সেই মৌলিক অধিকার সূত্র ধরে তিনি যে মতামত দিলেন এর জন্যে তাঁকে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে রাষ্ট্রের আইন কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা সেদিন রাতে পিটিয়ে তাকে হত্যা করলো। কি নির্মমতা, এমন নির্মমতা যারা করেন এবং করেছেন তারা কি মানুষ না মানুষ রূপী পিশাচ সেটাই বড় প্রশ্ন। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগ ১১জন ছাত্র নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করেছে। আর পুলিশ এদের মধ্যে নয় জনকে আটক করেছে। আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন এবং তিনি এই হত্যার বিচার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছেন। যেন আর কোন বাবাকে এমন অবস্থায় মুখোমুখি হতে না হয়। এই চাওয়া শুধু আবরারের বাবার নয়, এই চাওয়া কুষ্টিয়ার গ্রামের মানুষের, এ চাওয়া তার সহপাঠী, শিক্ষার্থীসহ গোটা দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষের।
শুধু বুয়েট নয় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নামে যা করা হচ্ছে তা কোন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি নয়, আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তো নয়ই। তারপরেও কি ভাবে এসব পাপাচার করে চলেছে ওই সংগঠনের নামে কিছু ব্যক্তি সেটাই এ সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এর অবসান হওয়া জরুরী। আমরা আবরার হত্যার বিচার চাই, চাই খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি। আমরা আশা করি রাষ্ট্র এবং সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে যাতে কোন ছাত্র সংগঠনের নামে কেও কোন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও এভাবে হত্যা করতে না পারে।
চাই বিচার ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি
অক্টোবর ১০
০৩:৪৫
২০১৯